১ বিটকয়েন সমান কত টাকা | বিটকয়েনের বর্তমান মূল্য ২০২৪

১ বিটকয়েন সমান কত টাকা

বর্তমান যুগে ডিজিটাল মুদ্রার প্রতি মানুষের আগ্রহ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিটকয়েন। “বিটকয়েন” শব্দটি এখন আর কেবল প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং সাধারণ মানুষও এই মুদ্রা নিয়ে আগ্রহী। বিটকয়েনকে বিশ্বের প্রথম এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে ধরা হয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো ১ বিটকয়েন সমান কত টাকা এর আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় মূল্যমান এবং এটি কিভাবে কাজ করে। এই বিষয়ে সঠিক তথ্য জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় যেমন বিটকয়েন কি, এটি কীভাবে মূল্যায়িত হয় এবং বাংলাদেশের জন্য এর প্রাসঙ্গিক মূল্য কী তা আলোচনা করবো।

আরো পড়ুনঃ দুবাই সোনার দাম কত 

বিটকয়েন কি?

বিটকয়েন একটি ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা যা ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে পরিচিত। এটি সেন্ট্রাল ব্যাংক বা কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ন্ত্রণে নয় বরং এটি সম্পূর্ণরূপে বিকেন্দ্রীভূত এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিচালিত হয়। ২০০৯ সালে ছদ্মনাম “সাতোশি নাকামোতো” ব্যবহারকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এটি উদ্ভাবন করে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি মুদ্রা তৈরি করা যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজে লেনদেন করা যায় এবং প্রথাগত মুদ্রার মতো সিস্টেমিক ঝুঁকির বাইরে থাকে। বিটকয়েন লেনদেনের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা এবং নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করে যা সাধারণ ব্যাংকিং লেনদেনের চেয়ে আলাদা।

বিটকয়েনের মুল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া

বিটকয়েনের মূল্য নির্ধারণে কোনো কেন্দ্র বা নির্দিষ্ট ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করে না। এর মূল্য চাহিদা এবং জোগানের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ যখন বিটকয়েনের চাহিদা বৃদ্ধি পায় তখন এর দাম বৃদ্ধি পায় এবং চাহিদা কমলে দাম কমে যায়। এছাড়াও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা, বিটকয়েনের ব্যবহার বৃদ্ধি বা হ্রাসের হার এবং বড় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এই মূল্যে প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ যদি একটি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হয় তবে লোকজন তাদের সঞ্চয়ের জন্য বিটকয়েনের দিকে ঝুঁকতে পারে যার ফলে এর দাম বৃদ্ধি পেতে পারে।

১ বিটকয়েন সমান কত টাকা বাংলাদেশের?

বাংলাদেশে বিটকয়েনের দাম আন্তর্জাতিক মার্কেট রেটের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। বর্তমানে ১ বিটকয়েনের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য প্রায় $৩৪,০০০ – $৩৬,০০০ মার্কিন ডলার (নভেম্বর ২০২৪ এর হিসাব অনুযায়ী)। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই পরিমাণ অর্থ প্রায় ৩,৫৭,০০,০০০ টাকা থেকে ৩,৭৮,০০,০০০ টাকার মধ্যে পড়ে (১ ডলার ≈ ১০৫ টাকা ধরলে)। তবে এই দাম নিয়মিত পরিবর্তিত হয় এবং এক্সচেঞ্জ রেটের ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে সরাসরি বিটকয়েন কেনা-বেচা সহজ নয় কারণ এটি এখানকার সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নয়। তবে কিছু ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বৈশ্বিক রেট অনুযায়ী বিটকয়েনের মুল্য নির্ধারণ করা সম্ভব।

১ বিটকয়েন সমান কত ডলার?

আন্তর্জাতিক মার্কেটে বিটকয়েনের মূল্য মার্কিন ডলারে প্রকাশ করা হয়। বর্তমানে বিটকয়েনের দাম প্রতি ইউনিটে প্রায় $৩৪,০০০ থেকে $৩৬,০০০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করে। এই দাম অনেকটা স্টক মার্কেটের মতোই প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। যেখানে চাহিদা এবং সরবরাহের ভিত্তিতে বিটকয়েনের মূল্য ওঠানামা করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অবস্থাও বিটকয়েনের দামে প্রভাব ফেলে। মার্কিন ডলার হচ্ছে বিটকয়েনের মূল্য পরিমাপের প্রধান মুদ্রা কারণ এটি আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

১ বিটকয়েন সমান কত সাতোশি?

বিটকয়েনের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম একক হলো “সাতোশি” যা বিটকয়েনের উদ্ভাবকের নামানুসারে রাখা হয়েছে। ১ বিটকয়েন সমান ১০০ মিলিয়ন সাতোশি। অর্থাৎ ১ সাতোশি = ০.০০০০০০০১ বিটকয়েন। সাতোশি ব্যবহারের মাধ্যমে বিটকয়েনের ক্ষুদ্রতম লেনদেন সম্ভব হয় যা মুদ্রার ব্যবহারিকতার ক্ষেত্রেও বেশ সহায়ক। ক্ষুদ্র লেনদেনের জন্য সাতোশি ব্যবহার করে বিটকয়েনের দামকে সঠিকভাবে প্রকাশ করা যায় এবং এটি বিটকয়েনের লেনদেনের সুবিধা বাড়ায়।

বিটকয়েন কেনার ও বিক্রির প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে বিটকয়েন কেনা এবং বিক্রির জন্য কিছু জনপ্রিয় পদ্ধতি রয়েছে তবে সরাসরি এই ধরনের লেনদেন খুবই সীমাবদ্ধ কারণ সরকার এখনো বিটকয়েনকে বৈধতা দেয়নি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম যেমন Binance, Coinbase, Kraken ইত্যাদি ব্যবহার করে কিছু বাংলাদেশি বিটকয়েন কেনা এবং বিক্রি করেন। এ ধরনের প্ল্যাটফর্মে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় এবং বিভিন্ন পরিচয় যাচাইকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এরপর ব্যবহারকারী তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে 

এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিটকয়েন কেনার প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ:

  • অ্যাকাউন্ট খোলা এবং ভেরিফিকেশন: প্রথমে নির্দিষ্ট ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হয়। একাউন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য পরিচয়পত্র এবং ছবির প্রয়োজন হতে পারে।
  • টাকা ডিপোজিট: এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখতে হয় যা পরবর্তীতে বিটকয়েন কেনার জন্য ব্যবহার করা হবে।
  • বিটকয়েন কেনা: এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মে বিটকয়েনের বর্তমান মূল্য দেখে সেই অনুযায়ী বিটকয়েন কেনা যায়।
  • ওয়ালেটে সংরক্ষণ: বিটকয়েন কেনার পর সেটি নিরাপদভাবে সংরক্ষণ করতে ডিজিটাল বা হার্ডওয়্যার ওয়ালেটে রাখা যেতে পারে।

বিক্রির ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি ঠিক একই রকম তবে বিক্রয়কৃত বিটকয়েনের পরিমাণ এবং মূল্য নির্ধারিত হতে হবে। তবে বাংলাদেশে সরাসরি ক্রিপ্টো লেনদেন এখনও অবৈধ হওয়ায় সাধারণত স্থানীয় লেনদেনের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করা হয়।

বিটকয়েনের বৈধতা এবং বাংলাদেশের নিয়মাবলী

বাংলাদেশে বিটকয়েনের বৈধতা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার এখনো কোনো ডিজিটাল বা ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার অনুমোদন করেনি। আইনগতভাবে এখানে বিটকয়েনের ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং সরকার বিভিন্ন সময়ে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ সালে একটি নির্দেশনা জারি করে সতর্ক করেছে যেখানে বলা হয়েছে যে বিটকয়েন এবং অন্যান্য ডিজিটাল মুদ্রা দেশের অর্থনৈতিক সুরক্ষার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

বাংলাদেশে যারা বিটকয়েন কিনতে বা বিক্রি করতে চান তাদের মধ্যে আইনগত ঝুঁকি রয়েছে কারণ দেশের অর্থনীতি এবং ব্যাংকিং সেক্টরে এটি অপ্রত্যাশিত প্রভাব ফেলতে পারে। তবে অনেক দেশ ইতিমধ্যে বিটকয়েনকে বৈধতা দিয়েছে যা বাংলাদেশের ক্রিপ্টো ইকোসিস্টেমের ভবিষ্যতের বিষয়ে একটি নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।

বিটকয়েনের সুবিধা এবং অসুবিধা

বিটকয়েনের অনেক সুবিধা রয়েছে তবে এর কিছু অসুবিধাও বিদ্যমান যা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। এখানে বিটকয়েনের প্রধান সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো তুলে ধরা হলো:

বিটকয়েনের সুবিধাসমূহ

  • বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা: বিটকয়েন কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় ফলে এর উপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব কম।
  • আন্তর্জাতিক লেনদেনের সুবিধা: বিভিন্ন দেশের মধ্যে দ্রুত এবং স্বল্প খরচে লেনদেনের সুযোগ করে দেয়।
  • নিরাপত্তা: ব্লকচেইন প্রযুক্তি বিটকয়েনের লেনদেনকে অত্যন্ত সুরক্ষিত করে তুলেছে।
  • স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তা: ব্যবহারকারীর সম্পূর্ণ লেনদেনের গোপনীয়তা থাকে যা প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সম্ভব নয়।

বিটকয়েনের অসুবিধাসমূহ

  • বাজারের অস্থিরতা: বিটকয়েনের মূল্য প্রায়শই ওঠানামা করে যা বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
  • আইনগত সমস্যার ঝুঁকি: বাংলাদেশের মতো দেশে এটি এখনো অবৈধ এবং আইনগতভাবে ব্যবহার করা যায় না।
  • প্রযুক্তিগত জ্ঞান প্রয়োজন: বিটকয়েন ব্যবহারে কিছু প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রয়োজন যা সবার জন্য সহজলভ্য নয়।
  • নিরাপত্তা ঝুঁকি: যদিও এটি সুরক্ষিত তবুও হ্যাকিং বা চুরি হওয়ার ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়।

বিটকয়েন বিনিয়োগের ঝুঁকি এবং করণীয়

বিটকয়েন বিনিয়োগে অনেক সম্ভাবনা থাকলেও এতে বড় ঝুঁকি রয়েছে। এর দাম নিয়মিত ওঠানামা করে যার ফলে বিনিয়োগের সঠিক সময় নির্ধারণ করা কঠিন হতে পারে। অনেক বিনিয়োগকারী এটি থেকে লাভ করতে পারলেও সঠিক তথ্য এবং গবেষণার অভাবে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

বিটকয়েনে বিনিয়োগ করার আগে কিছু সতর্কতা গ্রহণ করা জরুরি যেমন:

  • মার্কেট গবেষণা: বিটকয়েনের বাজার মূল্য এবং বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা।
  • ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: বিনিয়োগের পরিমাণ সীমিত রাখা এবং শুধুমাত্র সেই অর্থ বিনিয়োগ করা যা হারানোর জন্য প্রস্তুত।
  • নির্ভরযোগ্য এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার: বিটকয়েন লেনদেনে বিশ্বাসযোগ্য এবং নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম বেছে নেওয়া।

বাংলাদেশে বিটকয়েনের ভবিষ্যত

বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যত অনেকাংশে অনিশ্চিত হলেও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে সাথে এটি একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হয়ে উঠছে। বিশ্বের অনেক দেশ ইতোমধ্যেই বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সিকে আইনি মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যদি বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার এবং এর নিয়মাবলী আরও স্পষ্ট করা হয় তাহলে এটি একটি নতুন ধরনের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ আমেরিকার ভিসা দাম ২০২৪

উপসংহার – ১ বিটকয়েন সমান কত টাকা

বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থাকে একটি নতুন দিক দিয়েছে। বাংলাদেশে বিটকয়েনের বৈধতা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ হলেও এর জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। ১ বিটকয়েন সমান কত টাকা বা মার্কেট রেট সম্পর্কে জানার জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে আপডেট থাকা গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগকারীদের জন্য বিটকয়েন একটি নতুন সম্ভাবনা হলেও বিনিয়োগের আগে যথাযথ গবেষণা এবং সতর্কতা নেওয়া আবশ্যক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *