হুইলচেয়ার দাম কত – আপডেট ২০২৫

হুইলচেয়ার দাম

হুইলচেয়ার একটি চলনক্ষম চেয়ার যা সাধারণত শারীরিকভাবে অক্ষম বা চলাচলে অসুবিধাগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা করতে ব্যবহৃত হয়। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, হুইলচেয়ারের প্রাথমিক রূপ প্রথম দেখা যায় প্রায় ১৫৯৫ সালে। তবে আধুনিক হুইলচেয়ারের আবির্ভাব ঘটে বিংশ শতাব্দীতে, যখন চিকিৎসা ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় এগুলোর ব্যবহার শুরু হয়।

হুইলচেয়ার সাধারণত দুটি শ্রেণির মানুষ ব্যবহার করে:

  1. স্থায়ীভাবে শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি – যেমন স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি, পক্ষাঘাত বা জন্মগত প্রতিবন্ধকতা।

  2. অস্থায়ীভাবে চলাচলে অক্ষম ব্যক্তি – যেমন সার্জারি বা দুর্ঘটনার পর পুনর্বাসনকালে।

হুইলচেয়ার শুধু চলাচলের একটি মাধ্যমই নয়, এটি একজন ব্যবহারকারীর আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতার প্রতীক। এটি ব্যবহারকারীদের স্কুল, কর্মস্থল বা সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে, যা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।


বাংলাদেশে হুইল চেয়ারের প্রকারভেদ

বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন ধরণের হুইলচেয়ার পাওয়া যায়, যা রোগীর শারীরিক অবস্থা ও ব্যবহারের সুবিধা অনুসারে তৈরি।

ম্যানুয়াল হুইলচেয়ার

  • হাত দিয়ে ঠেলে চালানো হয়

  • হালকা ওজন এবং সহজ বহনযোগ্য

  • দাম তুলনামূলক কম

কমোড হুইলচেয়ার

  • চলাফেরার পাশাপাশি টয়লেটের কাজেও সহায়ক

  • বয়স্ক ও বিছানাগ্রস্ত রোগীদের জন্য উপযুক্ত

  • অধিকাংশ মডেলেই প্লাস্টিক বা স্টিল কমোড সিট থাকে

রেকলাইনার বা স্লিপিং হুইলচেয়ার

  • পুরোপুরি শোয়া যায় এমন ব্যবস্থা

  • দীর্ঘ সময় বসে থাকার রোগীদের জন্য

  • সাধারণত হেডরেস্ট, পা তুলে রাখার অংশসহ আসে

ট্রাভেল ও ভাঁজযোগ্য হুইলচেয়ার

  • হালকা ও ভাঁজযোগ্য, সহজে বহনযোগ্য

  • পিকনিক, হাসপাতাল যাতায়াতে উপযোগী

ইলেকট্রিক বা ব্যাটারি চালিত হুইলচেয়ার

  • মোটরচালিত ও রিমোট বা জয়স্টিক নিয়ন্ত্রিত

  • চালাতে শারীরিক শক্তির প্রয়োজন নেই

  • দাম বেশি হলেও স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ দেয়

হেভি ডিউটি হুইলচেয়ার ও শিশুদের জন্য মডেল

  • ওভারওয়েট রোগীদের জন্য স্টিল বা শক্ত ফ্রেমের হুইলচেয়ার

  • শিশুদের শরীর অনুযায়ী ছোট সাইজের মডেল


হুইল চেয়ার দাম কত ২০২৫ সালে? (আপডেটেড তালিকা)

বাংলাদেশে ২০২৫ সালের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, হুইলচেয়ারের দাম ব্যবহার, বৈশিষ্ট্য, ফ্রেম ও ব্র্যান্ড অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।

সাধারণ ম্যানুয়াল হুইলচেয়ার দাম

  • সর্বনিম্ন: ৳৬,০০০ – ৳৭,০০০

  • উদাহরণ: KY-809 মডেল (BDStall) – ৳৭,০০০
    【সূত্র: BDStall】

কমোড হুইলচেয়ার দাম

  • স্ট্যান্ডার্ড কমোড: ৳৬,০০০ – ৳১১,৫০০

  • উন্নত ফিচার সহ মডেল: ৳১৬,০০০ – ৳১৮,৫০০
    【সূত্র: BD Medical Store】

উন্নত বৈশিষ্ট্য (স্লিপিং, রেকলাইনার) সহ মডেলের দাম

  • রেকলাইনার ও স্লিপিং হুইলচেয়ার: ৳১৮,০০০ – ৳১৯,০০০

  • বহুমুখী ফাংশন (ট্রান্সফার লিফট সহ): ৳৪০,০০০ পর্যন্ত

ইলেকট্রিক হুইলচেয়ার দাম

  • সাধারণ মডেল: ৳৬৫,০০০ – ৳৭০,০০০

  • উন্নত ব্যাটারি মডেল: ৳১,০০,০০০ – ৳১,৫০,০০০
    【সূত্র: BDStall, BD Medical Store, CareZone】

ভিন্ন ব্র্যান্ড ও সাপ্লায়ারভেদে দামের পার্থক্য

একই স্পেসিফিকেশন থাকা সত্ত্বেও ব্র্যান্ডভেদে দাম কমবেশি হতে পারে। যেমন:

  • KY116LA মডেল (Kaiyang): ৳১,২০,০০০

  • Local Electric Wheelchair: ৳৬৫,০০০

অনলাইন বনাম অফলাইন মার্কেটের দাম

  • অনলাইনে সাধারণত কিছুটা বেশি/কম হতে পারে ডিসকাউন্ট বা ডেলিভারি চার্জের কারণে।

  • অফলাইনে দর কষাকষির সুবিধা থাকলেও ব্র্যান্ডেড মডেল পাওয়া কঠিন।

কোন হুইলচেয়ার আপনার জন্য উপযুক্ত?

হুইলচেয়ার কেনার আগে ব্যবহারকারীর শারীরিক অবস্থা, দৈনন্দিন প্রয়োজন ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনা করা জরুরি।

বয়স ও শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী পছন্দ

বয়স্ক ব্যক্তি বা যাদের হাতের শক্তি কম, তাদের জন্য ম্যানুয়াল হুইলচেয়ার চালানো কঠিন হতে পারে। সেক্ষেত্রে কমোড বা ইলেকট্রিক হুইলচেয়ার উপযুক্ত। আবার তরুণ বা স্বল্পকালীন শারীরিক সমস্যায় যারা ভুগছেন, তারা সাধারণ ম্যানুয়াল হুইলচেয়ার বেছে নিতে পারেন।

ইনডোর বনাম আউটডোর ব্যবহারের জন্য নির্বাচন

ইনডোর ব্যবহারের জন্য হালকা ও ছোট মডেল ভালো। তবে যদি বাইরে চলাফেরা করতে হয় (যেমন: অফিস, হাসপাতাল বা বাজার), তাহলে বড় চাকাযুক্ত ও রেকলাইনার সুবিধাযুক্ত হুইলচেয়ার কার্যকর।

স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের জন্য উপযুক্ততা

স্বল্পমেয়াদি ব্যবহারে সস্তা বা ভাড়া হুইলচেয়ার ব্যবহার উপযোগী। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের জন্য ফোল্ডিং, কমোড ও কুশনযুক্ত হুইলচেয়ার বেছে নেওয়াই ভালো।


হুইলচেয়ার কোথায় পাওয়া যায়? (বাংলাদেশে)

বাংলাদেশে অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমেই হুইলচেয়ার পাওয়া যায়।

অনলাইন স্টোর: BDStall, BD Medical Store, CareZone

এই জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলোতে হুইলচেয়ারের বিস্তারিত বিবরণ, দাম, ব্র্যান্ড ও ফিচার অনুযায়ী ফিল্টার করে বেছে নেওয়া যায়। ঘরে বসেই অর্ডার করা যায় এবং হোম ডেলিভারির সুবিধা পাওয়া যায়।

ঢাকার বড় ফার্মেসি ও হাসপাতাল এলাকা

ঢাকার পঞ্চবটি, আজিমপুর, শ্যামলী, নিউ মার্কেট এলাকায় বেশ কিছু বড় ফার্মেসি ও মেডিকেল সরঞ্জাম বিক্রির দোকানে হুইলচেয়ার পাওয়া যায়। দর কষাকষির সুযোগ ও সরাসরি দেখে নেওয়ার সুবিধা থাকায় অনেকেই অফলাইনে কিনে থাকেন।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাপ্লাইয়ার

অনেক উপজেলা শহরেই এখন মেডিকেল সরঞ্জাম বিক্রির দোকান রয়েছে। আপনি নিকটস্থ শহরের ফার্মেসিতে বা চিকিৎসা সরঞ্জামের দোকানে যোগাযোগ করতে পারেন।


হুইলচেয়ার কেনার আগে যেসব বিষয় খেয়াল রাখা উচিত

একটি হুইলচেয়ার কিনতে গিয়ে শুধু দাম না, আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা দরকার।

কাঠামো ও ফ্রেমের উপাদান (স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম)

স্টিল ফ্রেম শক্ত হলেও তুলনামূলক ভারী। অন্যদিকে অ্যালুমিনিয়াম হালকা ও জং ধরে না। বহনযোগ্যতার জন্য অ্যালুমিনিয়াম চেয়ার অনেক সুবিধাজনক।

ওজন বহনের ক্ষমতা ও স্থায়িত্ব

প্রত্যেক হুইলচেয়ারের একটি নির্দিষ্ট ওজন সীমা থাকে। হেভি ইউজারদের জন্য হেভি ডিউটি মডেল বেছে নেওয়া জরুরি।

গতি ও ব্যাটারির সক্ষমতা (ইলেকট্রিক মডেল)

ইলেকট্রিক হুইলচেয়ারের ব্যাটারি চার্জ কতক্ষণ থাকে, কত কিলোমিটার যেতে পারে এবং চার্জিং টাইম — এসব দেখে নেওয়া উচিত।

ফোল্ডিং ব্যবস্থা ও বহনযোগ্যতা

ভাঁজযোগ্য হুইলচেয়ার ভ্রমণের জন্য আদর্শ। সহজে গাড়িতে বহন করা যায় এবং সংরক্ষণে কম জায়গা লাগে।

অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য (কমোড, সিট বেল্ট, হেড রেস্ট)

কিছু হুইলচেয়ারে আছে ইনবিল্ট কমোড, কুশন সিট, হেড রেস্ট বা সিট বেল্ট — যা দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে আরাম দেয়।


হুইলচেয়ার ব্যবহারের উপকারিতা ও সতর্কতা

চলাচলের স্বাধীনতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি

হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও তারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেন। এটি ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস ও মানসিক শক্তি বাড়ায়।

দীর্ঘদিন ব্যবহারে যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ

চাকা, ফ্রেম, কমোড সিট, ব্যাটারি (যদি থাকে) ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার ও পরীক্ষা করা জরুরি। তেল দেওয়া, ঢিলা স্ক্রু টাইট করা এবং কভার পরিষ্কার রাখলে হুইলচেয়ার দীর্ঘদিন টিকে।

রোগীর নিরাপত্তা ও সঠিক ব্যবহারের গাইডলাইন

চাকা লক করা, ঢালু জায়গায় মনোযোগী থাকা এবং সঠিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রশিক্ষণ থাকলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে যায়।

হুইলচেয়ার সংক্রান্ত প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)

বাংলাদেশে হুইলচেয়ার কেনার আগে অনেকেই কিছু সাধারণ প্রশ্ন করে থাকেন, যেগুলোর উত্তর জানা থাকলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। যেমন অনেকেই জানতে চান, সবচেয়ে সস্তা হুইলচেয়ার কোনটি? সাধারণ ম্যানুয়াল হুইলচেয়ারগুলোই সবচেয়ে কম দামে পাওয়া যায়, যা ৫,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। আবার অনেকে প্রশ্ন করেন, ইলেকট্রিক হুইলচেয়ারের চার্জ কতক্ষণ থাকে? এর উত্তর নির্ভর করে ব্যাটারির ক্ষমতার উপর। সাধারণত একটি ব্যাটারি পূর্ণ চার্জে ১৫–২০ কিলোমিটার পর্যন্ত চালানো যায় এবং চার্জ হতে ৫–৮ ঘণ্টা সময় লাগে।

কেউ কেউ জানতে চান, সরকারি সহায়তায় কি হুইলচেয়ার পাওয়া যায়? হ্যাঁ, বাংলাদেশে অনেক এনজিও ও সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে হুইলচেয়ার সরবরাহ করে থাকে। এর জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। অনলাইনে হুইলচেয়ার কিনলে কী কী সুবিধা ও ঝুঁকি থাকে, সেটিও একটি সাধারণ প্রশ্ন। অনলাইনে কেনাকাটায় বিভিন্ন মডেলের মধ্যে তুলনা করা, ঘরে বসে অর্ডার ও হোম ডেলিভারি সুবিধা থাকে। তবে ঝুঁকির মধ্যে আছে ভুল পণ্য পাঠানো, বিলম্বিত ডেলিভারি বা রিটার্ন নিয়ে ঝামেলা।

এছাড়া অনেকে ভাবেন, বিদেশি ব্র্যান্ড কিনলে বেশি ভালো হবে কি না। বিদেশি ব্র্যান্ড সাধারণত উন্নত ফিচার দেয়, তবে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে অনেক ভালো মানের এবং তুলনামূলক সস্তা বিকল্প রয়েছে। এ জন্য রিভিউ পড়ে ও গ্যারান্টি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।


উপসংহার: হুইলচেয়ার কেনা কি আপনার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত?

হুইলচেয়ার কিনতে গেলে শুধু দাম নয়, ব্যক্তিগত চাহিদা, স্বাস্থ্য অবস্থা, এবং ব্যবহারের সময়কাল সব কিছু বিবেচনায় রাখতে হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে হুইলচেয়ারের দাম তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী এবং অনলাইন-অফলাইন উভয় মাধ্যমেই সহজলভ্য। আপনি যদি স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুবিধার ভুক্তভোগী হন কিংবা পরিবারে কেউ থাকেন, তাহলে মানসম্মত একটি হুইলচেয়ার জীবনযাত্রাকে অনেক সহজ করে তুলতে পারে। ছোটখাটো ইনজুরি বা অস্থায়ী ব্যবহারের ক্ষেত্রেও হুইলচেয়ার একটি কার্যকর সহায়ক।

অতএব, হুইলচেয়ার কেনার আগে নিজের পরিস্থিতি বুঝে মডেল ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করুন এবং নির্ভরযোগ্য বিক্রেতা থেকে কিনুন। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। আপনার যদি এই বিষয়ে কোনও অভিজ্ঞতা, মতামত বা প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে মন্তব্য করে জানাতে পারেন। অন্যদের সাথেও এই তথ্যটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *