গ্যাস রেগুলেটর এর দাম কত ২০২৪

গ্যাস রেগুলেটর এর দাম

গ্যাস রেগুলেটর আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য উপাদান। এটি গ্যাস সিস্টেমের মূল নিয়ন্ত্রণকারী অংশ হিসেবে কাজ করে এবং আমাদের বাড়ির গ্যাস সরবরাহ সুরক্ষিত এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। বাংলাদেশে গ্যাস রেগুলেটর ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম কারণ এটি আমাদের গ্যাস সরবরাহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে। গ্যাস রেগুলেটর ব্যবহারের ফলে আমরা গ্যাসের সঠিক প্রবাহ ও চাপ বজায় রাখতে পারি। আজকের এই পোস্টে আমরা বিভিন্ন ধরনের গ্যাস রেগুলেটর এর দাম কত তা জানাবো।

গ্যাস রেগুলেটর এর কাজ কি

গ্যাস রেগুলেটর মূলত একটি নিয়ন্ত্রণকারী ডিভাইস যা গ্যাসের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং নির্ধারিত চাপে গ্যাস সরবরাহ করে। এটি গ্যাসের প্রবাহ কম বা বেশি হওয়া থেকে রোধ করে যা গ্যাস সিস্টেমের স্থিতিশীলতা ও সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্যাস রেগুলেটর সাধারণত দুটি প্রধান ধরণের হয়: উচ্চ চাপ রেগুলেটর এবং নিম্ন চাপ রেগুলেটর। উচ্চ চাপ রেগুলেটর বড় শিল্প স্থাপনার জন্য ব্যবহৃত হয় যেখানে নিম্ন চাপ রেগুলেটর গৃহস্থালী ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।

উচ্চ চাপ রেগুলেটর সাধারণত এমন স্থাপনায় ব্যবহৃত হয় যেখানে গ্যাসের প্রবাহ এবং চাপ বেশি থাকে। এগুলি সাধারণত বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয় যেমন কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি, তেল শোধনাগার এবং বড় বড় বয়লারে। অন্যদিকে নিম্ন চাপ রেগুলেটর গৃহস্থালী কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি গ্যাস চুলা, গিজার এবং অন্যান্য গ্যাস চালিত যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হয়। গৃহস্থালী কাজে নিম্ন চাপ রেগুলেটর ব্যবহারের ফলে গ্যাসের প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে।

গ্যাস রেগুলেটর এর দাম কত

২০২৪ সালে বাংলাদেশের বাজারে গ্যাস রেগুলেটর এর দাম নির্ভর করে বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর। সাধারণত গ্যাস রেগুলেটর এর দাম ৩০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে পরিবর্তিত হয়। দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্র্যান্ড, মডেল এবং রেগুলেটর এর বৈশিষ্ট্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ উন্নত মানের সেফটি রেগুলেটর এর দাম সাধারণত একটু বেশি হয়।

বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গ্যাস রেগুলেটর পাওয়া যায়। যেমন লিবার্টি, ওয়ালটন, স্নোটেক্স এবং স্টারগ্যাস। এই ব্র্যান্ডগুলো তাদের মান, স্থায়িত্ব এবং নিরাপত্তার জন্য পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ লিবার্টি ব্র্যান্ডের একটি সাধারণ গ্যাস রেগুলেটর এর দাম প্রায় ৫০০ টাকা। যেখানে উন্নত মানের সেফটি রেগুলেটর এর দাম প্রায় ১৫০০ টাকা হতে পারে।

  • Lpg Gas Regulator 12 feet Pipe & hus Clam Free (সিলিন্ডার গ্যাসের রেগুলেটর) – ৭৪০ টাকা।
  • LPG (22mm) Gas Regulator with Meter Display – ৪৩০ টাকা।
  • LPG Safety Device cum Meter Regulator (22 MM) – ১৩২০ টাকা।
  • High quality LPG gas regulator of Denmark with meter and safety device (size 22mm) – ১৩০০ টাকা।
  • Lpg safety device with meter display regulator ( 22mm or 20mm)( havy duty) – ১১৯০ টাকা।
  • Denmark (22mm) LPG Gas Safety Sensor Device Cum Meter Regulator – ১২৩০ টাকা।
  • RFL Gas regulator turkey 22mm lpg – ৩২০ টাকা।
  • LPG (22mm)gas regulator whit meter display – ৪১০ টাকা।
  • Superman high pressure regulator LPG Regulator 22MM With Meter – ১১৫০ টাকা।

গ্যাস সেফটি রেগুলেটর এর দাম কত

সেফটি রেগুলেটর বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে গ্যাস সরবরাহের সুরক্ষা বাড়ানোর জন্য। এই রেগুলেটরগুলো সাধারণ রেগুলেটরের তুলনায় একটু বেশি নিরাপত্তা প্রদান করে। যেমন অটোমেটিক শাট অফ ফিচার যা গ্যাস লিক হলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের বাজারে গ্যাস সেফটি রেগুলেটর এর দাম ১০০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং তাদের মডেল অনুযায়ী দাম পরিবর্তিত হয়।

সেফটি রেগুলেটর এর দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফ্যাক্টর কাজ করে। সেফটি ফিচারের সংখ্যা, নির্মাণ মান এবং ব্র্যান্ডের পরিচিতি এ সমস্ত ফ্যাক্টরের মধ্যে অন্যতম। উদাহরণস্বরূপ ওয়ালটনের একটি সাধারণ সেফটি রেগুলেটর এর দাম প্রায় ১০০০ টাকা। তবে আরও উন্নত মডেলের দাম প্রায় ২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটর দাম

গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটর সাধারণত সিলিন্ডারের সাথে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয় এবং এগুলো বিভিন্ন মাপ ও ধরনে পাওয়া যায়। গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটর এর দাম ৩০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। জনপ্রিয় ব্র্যান্ড যেমন বাটারফ্লাই, ওয়ালটন এবং স্টারগ্যাস বিভিন্ন মডেলের রেগুলেটর সরবরাহ করে যা বাজারে প্রচলিত।

গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটর এর দাম নির্ভর করে এর গুণমান, নির্মাণ মান এবং ব্র্যান্ডের উপর। উদাহরণস্বরূপ বাটারফ্লাই ব্র্যান্ডের একটি সাধারণ গ্যাস সিলিন্ডার রেগুলেটর এর দাম প্রায় ৪০০ টাকা যেখানে উন্নত মানের রেগুলেটর এর দাম প্রায় ৮০০ টাকা হতে পারে।

গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটর খোলার নিয়ম

গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটর খোলার সময় কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা উচিত। প্রথমে সিলিন্ডারের ভালভ বন্ধ করতে হবে। তারপর রেগুলেটরের হ্যান্ডেল বা নাট খুলতে হবে। রেগুলেটরটি সিলিন্ডারের উপর থেকে সাবধানে উঠিয়ে নিতে হবে। নতুন রেগুলেটর লাগানোর সময় সিলিন্ডারের মুখ পরিষ্কার করে নিন এবং রেগুলেটরটি সঠিকভাবে সেট করুন। সবশেষে ভালভ খুলে গ্যাস সরবরাহ পরীক্ষা করুন।

গ্যাস রেগুলেটর

রেগুলেটর খোলার সময় কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। প্রথমত নিশ্চিত করতে হবে যে আশেপাশে কোন আগুন বা স্ফুলিঙ্গ নেই। দ্বিতীয়ত রেগুলেটর খোলার সময় গ্যাসের গন্ধ পরীক্ষা করুন। যদি গ্যাসের গন্ধ পান তবে সাথে সাথে ভালভ বন্ধ করে নিন এবং নিরাপদ দূরত্বে চলে যান।

গ্যাস রেগুলেটর কেনার সময় কি কি লক্ষ্য রাখা উচিত

গ্যাস রেগুলেটর কেনার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিত। এতে আপনি একটি নিরাপদ, দীর্ঘস্থায়ী, এবং কার্যকরী রেগুলেটর পেতে পারেন। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো:

রেগুলেটরের মান:

  • ভালো মানের রেগুলেটর: একটি ভালো মানের রেগুলেটর দীর্ঘস্থায়ী এবং নিরাপদ। রেগুলেটরের মান নিশ্চিত করতে ব্র্যান্ড এবং মডেল পরীক্ষা করা উচিত।
  • বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড: লিবার্টি, ওয়ালটন, স্নোটেক্স ইত্যাদি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের রেগুলেটর কেনা উচিত কারণ এই ব্র্যান্ডগুলো মানের জন্য পরিচিত।

ওয়ারেন্টি এবং বিক্রয়োত্তর সেবা:

  • ওয়ারেন্টি: রেগুলেটর কেনার সময় ওয়ারেন্টি সুবিধা পাওয়া যায় কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
  • বিক্রয়োত্তর সেবা: বিক্রয়োত্তর সেবার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে যেন কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে দ্রুত সমাধান পাওয়া যায়।

ব্র্যান্ড এবং মডেল অনুযায়ী দাম যাচাই:

  • দাম যাচাই: বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং মডেলের রেগুলেটরের দাম যাচাই করা উচিত। এটি আপনাকে সঠিক দাম নির্ধারণ করতে সহায়তা করবে।
  • দাম এবং মানের তুলনা: দাম এবং মানের মধ্যে একটি ব্যালান্স রাখতে হবে যেন সঠিক মূল্যে ভালো মানের রেগুলেটর পাওয়া যায়।

নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য:

  • অটো শাট-অফ ফিচার: রেগুলেটরে অটো শাট-অফ ফিচার থাকলে তা জরুরি অবস্থায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করতে সহায়ক।
  • প্রেসার গেজ: প্রেসার গেজ সহ রেগুলেটর কিনলে গ্যাসের চাপ নিয়ন্ত্রণ ও মনিটর করা সহজ হয়।

স্থায়িত্ব ও সামঞ্জস্য:

  • স্থায়িত্ব: রেগুলেটরটির উপাদান এবং নির্মাণের মান দেখে এর স্থায়িত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
  • সামঞ্জস্য: রেগুলেটরটি আপনার গ্যাস সিলিন্ডারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।

ব্যবহারের সহজতা:

  • ইন্সটলেশন: রেগুলেটরটি সহজে ইন্সটল করা যায় কিনা তা দেখতে হবে।
  • নিয়ন্ত্রণ: রেগুলেটরের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যবহার করা সহজ এবং সুবিধাজনক কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।

গ্যাস রেগুলেটর এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ

গ্যাস রেগুলেটর এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ তার জীবন বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিতভাবে রেগুলেটর পরিষ্কার করা, গ্যাস লিক পরীক্ষা করা এবং রেগুলেটরের অবস্থান সঠিকভাবে যাচাই করা উচিত। এছাড়া সময়মত রেগুলেটর পরিবর্তন করা উচিত, বিশেষ করে যদি এটি পুরনো বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রেগুলেটর পরিষ্কারের জন্য প্রথমে রেগুলেটরের ভালভ বন্ধ করতে হবে এবং সিলিন্ডার থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। তারপর একটি শুকনো কাপড় দিয়ে রেগুলেটরের বাইরের অংশ পরিষ্কার করতে হবে। গ্যাস লিক পরীক্ষা করার জন্য রেগুলেটরের সংযোগস্থলে সাবান পানি প্রয়োগ করতে পারেন। যদি বুদবুদ তৈরি হয় তবে গ্যাস লিক হচ্ছে।

উপসংহার

গ্যাস রেগুলেটর আমাদের গ্যাস সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা গ্যাস সরবরাহের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। সঠিক রেগুলেটর নির্বাচন এবং এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত করে তোলে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন ধরণের গ্যাস রেগুলেটর পাওয়া যায়। যা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাচন করতে পারি। সঠিক তথ্য এবং জ্ঞান নিয়ে গ্যাস রেগুলেটর ব্যবহার করলে আমরা গ্যাস সংক্রান্ত যেকোনো বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারি।

সঠিক রেগুলেটর কেনা এবং এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের গ্যাস সিস্টেমের স্থায়িত্ব এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এছাড়া গ্যাস রেগুলেটরের দাম, ব্র্যান্ড এবং মডেল সম্পর্কে সচেতন থাকা আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের গ্যাস রেগুলেটর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *