ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি আজকের যুগে শুধুমাত্র সময় জানার জন্য ব্যবহৃত হয় না বরং ফ্যাশন, স্টাইল এবং টেকনোলজির একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ঘড়িগুলো বিশেষ করে সাঁতারু, ডাইভার এবং অন্যান্য আউটডোর কার্যকলাপের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশে ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে এবং ২০২৪ সালে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নতুন মডেল এবং উন্নত প্রযুক্তির ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি বাজারে এসেছে। এই আর্টিকেলে আমরা ২০২৪ সালের বাংলাদেশের বাজারে ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি দাম, বিভিন্ন প্রকারভেদ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করবো।
ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির প্রকারভেদ
ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির প্রধান প্রকারভেদগুলো হল এনালগ, ডিজিটাল, স্মার্ট ওয়াচ এবং ডাইভিং ওয়াচ। এনালগ ওয়াটারপ্রুফ ঘড়িগুলো সাধারণত ক্লাসিক ডিজাইন এবং স্টাইলের জন্য পরিচিত। এই ঘড়িগুলোতে স্টেইনলেস স্টিল, চামড়া বা রাবার স্ট্র্যাপ ব্যবহার করা হয়। ডিজিটাল ওয়াটারপ্রুফ ঘড়িগুলো সাধারণত আরও প্রযুক্তিগত সুবিধা প্রদান করে যেমন টাইমার, অ্যালার্ম, এবং ব্যাকলাইট।
স্মার্ট ওয়াচ ওয়াটারপ্রুফ ঘড়িগুলো শুধুমাত্র সময় জানানোর জন্য নয় বরং স্বাস্থ্য পরিমাপক, মেসেজ নোটিফিকেশন এবং অ্যাপ্লিকেশন চালানোর সুবিধাও প্রদান করে। ডাইভিং ওয়াচগুলি গভীর পানির নিচে ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয় যা উচ্চ মাত্রার ওয়াটারপ্রুফিং এবং কঠিন নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে তৈরি হয়।
ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি দাম কত ২০২৪
২০২৪ সালে বাংলাদেশে ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির দাম অনেকটা নির্ভর করে ব্র্যান্ড, মডেল এবং ফিচারের উপর। সাধারণ ওয়াটারপ্রুফ ঘড়িগুলোর দাম শুরু হয় ১,০০০ টাকা থেকে এবং তা ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। উন্নত ফিচার যেমন জিপিএস, হার্ট রেট মনিটর, এবং ওয়াইফাই সুবিধা সহ ঘড়িগুলোর দাম ২০,০০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৫০,০০০ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে। প্রতিটি ব্র্যান্ডের ঘড়ির দামও বিভিন্ন মডেল ও ফিচারের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
বাংলাদেশে নন ব্র্যান্ড কম দামি ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি দাম
বাংলাদেশের বাজারে নন-ব্র্যান্ডের কম দামি ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি ক্রেতাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষত যারা বাজেটের মধ্যে ভালো মানের ঘড়ি খুঁজছেন। এসব ঘড়ির দাম সাধারণত ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩,০০০ টাকার মধ্যে থাকে। সেগুলো বিভিন্ন ডিজাইন এবং ফিচারের সাথে পাওয়া যায়। যেমন স্টেইনলেস স্টিল বা সিলিকন স্ট্র্যাপ, ডিজিটাল ডিসপ্লে, এলইডি ব্যাকলাইট এবং স্টপওয়াচ ফাংশন।
এই নন-ব্র্যান্ড ঘড়িগুলো সাধারণত চীনে তৈরি এবং ঢাকার বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মার্কেট যেমন মতিঝিল, গুলিস্থান এবং নিউমার্কেটে সহজেই পাওয়া যায়। যদিও এই ঘড়িগুলোর ব্র্যান্ডের ঘড়ির মতো দীর্ঘস্থায়ীতা বা নির্ভরযোগ্যতা নেই। তবে সাশ্রয়ী মূল্যে আকর্ষণীয় ডিজাইন এবং বেসিক ওয়াটারপ্রুফিং ক্ষমতা থাকার কারণে অনেকেই এগুলো পছন্দ করেন।
ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির মডেল এবং দাম
মডেল | দাম |
সাধারণ ডিজিটাল ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি (LED Display) | ৫০০ – ৭০০ টাকা। |
স্পোর্টি ডিজাইন ডিজিটাল ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি | ৭০০ – ১,০০০ টাকা। |
মাল্টি-ফাংশন ডিজিটাল ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি (স্টপওয়াচ, অ্যালার্ম) | ১,০০০ – ১,৫০০ টাকা। |
রাবার স্ট্র্যাপ ডিজিটাল ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি | ৮০০ – ১,২০০ টাকা। |
স্টেইনলেস স্টিল ডিজিটাল ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি | ১,২০০ – ১,৮০০ টাকা। |
মাল্টি-কালার ব্যাকলাইট ডিজিটাল ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি | ১,৫০০ – ২,০০০ টাকা। |
টাচ স্ক্রিন ডিজিটাল ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি | ২,০০০ – ২,৫০০ টাকা। |
সিম্পল ডিজাইন ডিজিটাল ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি | ৫০০ – ১,০০০ টাকা। |
কিডস ডিজিটাল ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি | ৫০০ – ৮০০ টাকা। |
বিল্ট-ইন USB চার্জিং ডিজিটাল ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি | ২,০০০ – ৩,০০০ টাকা। |
ওয়াটারপ্রুফ এনালগ ঘড়ি দাম
বাংলাদেশে এনালগ ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির চাহিদা অনেক বেশি। ক্যাসিওর এনালগ ওয়াটারপ্রুফ ঘড়িগুলোর দাম সাধারণত ৭,০০০ টাকা থেকে শুরু হয় এবং উন্নত মডেলের জন্য তা ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সিটিজেনের এনালগ ঘড়ির দাম ১০,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। সিকোর উচ্চ মানের এনালগ ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির দাম ১৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এছাড়াও বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলোর এনালগ ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির দাম আরও বেশি হতে পারে।
ওয়াটারপ্রুফ ডিজিটাল ঘড়ি দাম
ডিজিটাল ঘড়ির মধ্যে ওয়াটারপ্রুফ ফিচার খুবই জনপ্রিয় বিশেষত তরুণদের মধ্যে। ক্যাসিও G-Shock সিরিজের ডিজিটাল ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির দাম ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। টিমেক্সের ডিজিটাল ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির দাম ৫,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে থাকে। সুয়াচের ডিজিটাল ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির দাম ৮,০০০ থেকে ১৮,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ডিজিটাল ঘড়ির দাম বিভিন্ন ফিচার এবং মডেলের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
ওয়াটারপ্রুফ স্মার্ট ওয়াচ ঘড়ি দাম
স্মার্ট ওয়াচগুলো আজকাল খুবই জনপ্রিয় এবং ওয়াটারপ্রুফ স্মার্ট ওয়াচগুলোর চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। বাংলাদেশে অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৮ এর দাম শুরু হয় ৩৫,০০০ টাকা থেকে এবং উন্নত মডেলের দাম ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। স্যামসাং গ্যালাক্সি ওয়াচের দাম ২০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। গারমিনের ফররানার সিরিজের স্মার্ট ওয়াচের দাম ৩০,০০০ থেকে ৭০,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য জনপ্রিয় স্মার্ট ওয়াচ ব্র্যান্ডের দাম এবং ফিচার বাংলাদেশে বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যায়।
ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি দাম ছেলেদের
ছেলেদের জন্য ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি বিভিন্ন স্টাইল এবং ফিচারে পাওয়া যায় যা তাদের ফ্যাশন এবং কার্যকারিতার সঙ্গে মানানসই। ক্যাসিও G-Shock সিরিজের ঘড়ি ছেলেদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় যা প্রায় ১০,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। সিকো এবং সিটিজেন এর ছেলেদের ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির দাম ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ছেলেদের জন্য ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির দাম এবং ফিচার বিবেচনা করে বিভিন্ন মডেল পাওয়া যায়।
ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি দাম মেয়েদের
মেয়েদের জন্য ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি স্টাইল এবং ফ্যাশন অনুযায়ী তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের বাজারে টিমেক্স এবং ক্যাসিও এর মেয়েদের জন্য ডিজাইন করা ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির দাম ৫,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। সিটিজেন এর মেয়েদের ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির দাম ১৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য ব্র্যান্ডের মেয়েদের জন্য আকর্ষণীয় ডিজাইন এবং ফিচার সমৃদ্ধ ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির দাম বিভিন্ন মডেল এবং ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করে।
কিভাবে সঠিক ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি নির্বাচন করবেন
ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি কেনার সময় কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত। প্রথমে ঘড়ির পানিরোধী ক্ষমতা (যেমন ৫০ মিটার, ১০০ মিটার) পরীক্ষা করতে হবে। ঘড়ির নির্মাণ উপাদান যেমন স্টেইনলেস স্টিল বা টাইটানিয়াম ভালো মানের হতে হবে। এছাড়া ঘড়ির স্টাইল এবং ফিচার আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাচন করা উচিত। ব্র্যান্ডের বিশ্বস্ততা এবং গ্রাহক পরিসেবা বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির সঠিক রেটিং পরীক্ষা করে দেখতে হবে যা ঘড়ির কার্যকারিতা নিশ্চিত করবে।
ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির রক্ষণাবেক্ষণ
ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির দীর্ঘস্থায়ীতা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন। ঘড়ির গ্যাসকেট এবং সিল নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে হবে। ঘড়ির ক্রাউন বা বোতামগুলো সবসময় সঠিকভাবে বন্ধ রাখতে হবে যাতে পানি ঢোকার ঝুঁকি না থাকে। ঘড়ি পরিষ্কার করার সময় মৃদু সাবান এবং পানি ব্যবহার করতে হবে এবং সরাসরি সূর্যালোকে রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া ঘড়ি ব্যবহারের পরে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলা উচিত যাতে পানি বা আর্দ্রতা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
উপসংহার
২০২৪ সালে ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির বাজারে প্রচুর বৈচিত্র্য এবং উন্নতি দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং মডেলের মধ্যে থেকে সঠিক ঘড়ি নির্বাচন করা ক্রেতাদের জন্য অনেক সহজ হয়েছে। ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির দাম এবং ফিচার বিবেচনা করে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ঘড়ি নির্বাচন করা উচিত। বাংলাদেশে ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির চাহিদা এবং বাজারের ধারা বিবেচনা করে, এই ঘড়িগুলোর মূল্য এবং সুবিধা সম্পর্কে সচেতন হওয়া ক্রেতাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাকে ২০২৪ সালে ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ি কেনার সময় সহায়ক হবে।