ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান ভাড়া ২০২৪

ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান ভাড়া

ঢাকা থেকে কক্সবাজার ভ্রমণ বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় যাত্রাপথ। কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত এবং দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন গন্তব্য। ঢাকার ব্যস্ত জীবন থেকে দূরে সরে কিছুটা নির্ভেজাল সময় কাটানোর জন্য কক্সবাজার একটি আদর্শ স্থান। তাই এই গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান ভাড়া সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ।

ঢাকা ও কক্সবাজার

ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় শহর যা একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় স্থান ও ব্যবসায়িক সুবিধা রয়েছে। ঢাকা একটি জীবন্ত শহর যেখানে সবসময় কিছু না কিছু ঘটে। এখানকার ঐতিহাসিক স্থানগুলো যেমন লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আধুনিক স্থাপত্যশিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

অন্যদিকে কক্সবাজার দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে অবস্থিত এবং এটি তার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের জন্য বিশ্বখ্যাত। কক্সবাজারে ভ্রমণ করলে দেখা যায় সুউচ্চ পাহাড়, মনোরম দ্বীপ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানে পর্যটকদের জন্য অনেক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে যেমন ইনানী বিচ, হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান, মহেশখালী দ্বীপ, এবং সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতের শান্ত ও স্নিগ্ধ পরিবেশ পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়।

ঢাকা টু কক্সবাজার বিমান সার্ভিস

ঢাকা থেকে কক্সবাজারে বিমান পরিষেবা বেশ কিছু এয়ারলাইন্স প্রদান করে। প্রধান এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এই এয়ারলাইন্সগুলো প্রতিদিন একাধিক ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। ফ্লাইটগুলোর সময়কাল সাধারণত ১ ঘন্টা থেকে ১ ঘন্টা ১৫ মিনিটের মধ্যে হয়। যাত্রীরা তাদের সুবিধামত সময়ে ফ্লাইট বুক করতে পারেন।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স দেশের জাতীয় এয়ারলাইন্স এবং এটি ঢাকা থেকে কক্সবাজারে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে। তাদের ফ্লাইটগুলোর সেবা মান ভাল এবং ভাড়া সাধারণত মধ্যম স্তরে থাকে। তারা প্রায়শই বিভিন্ন ডিসকাউন্ট ও অফার প্রদান করে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স একটি প্রাইভেট এয়ারলাইন্স এবং তারা বেশ কিছু সময় ধরে কক্সবাজার রুটে সেবা প্রদান করছে। তাদের ফ্লাইটগুলো বেশ আরামদায়ক এবং তারা ভাল মানের খাদ্য সরবরাহ করে। ভাড়ার দিক থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সাধারণত কিছুটা কম ভাড়া অফার করে।

নভোএয়ার
নভোএয়ার একটি আরও এক প্রাইভেট এয়ারলাইন্স যা কক্সবাজার রুটে খুবই জনপ্রিয়। তারা নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদান করে এবং তাদের ফ্লাইটগুলো সাধারণত সময়মত পরিচালিত হয়। নভোএয়ারও বিভিন্ন ডিসকাউন্ট ও অফার দিয়ে থাকে যা যাত্রীরা উপভোগ করতে পারেন।

রিজেন্ট এয়ারওয়েজ
রিজেন্ট এয়ারওয়েজ আরেকটি প্রাইভেট এয়ারলাইন্স যা ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। তাদের সেবা মান ভাল এবং তারা বেশ কিছু প্রমোশনাল অফার দিয়ে থাকে।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান ভাড়া কত

২০২৪ সালে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান ভাড়া অনেকটাই সাশ্রয়ী হয়েছে। সাধারনত ভাড়ার পরিমাণ ৪৫০০ থেকে ৭৫০০ টাকার মধ্যে থাকে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্স তাদের সার্ভিস ও সময়ের উপর ভিত্তি করে ভাড়ার পার্থক্য করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এবং নভোএয়ার সাধারণত কিছুটা কম ভাড়ায় ফ্লাইট অফার করে থাকে। নিচে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ভাড়ার তুলনামূলক বিশ্লেষণ দেয়া হলো।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স

  • ইকোনমি ক্লাস: ৫৫০০ থেকে ৭০০০ টাকা
  • বিজনেস ক্লাস: ১০,০০০ থেকে ১৩,০০০ টাকা

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

  • ইকোনমি ক্লাস: ৪৫০০ থেকে ৬৫০০ টাকা
  • বিজনেস ক্লাস: ৮,০০০ থেকে ১১,০০০ টাকা

নভোএয়ার

  • ইকোনমি ক্লাস: ৫০০০ থেকে ৬৮০০ টাকা
  • বিজনেস ক্লাস: ৯,০০০ থেকে ১২,০০০ টাকা

রিজেন্ট এয়ারওয়েজ

  • ইকোনমি ক্লাস: ৫০০০ থেকে ৭০০০ টাকা
  • বিজনেস ক্লাস: ৯,৫০০ থেকে ১২,৫০০ টাকা

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে এয়ারলাইন্সগুলো বিশেষ ছাড় ও অফার দেয় যা যাত্রীরা উপভোগ করতে পারেন। যেমন পিক সিজন বা উৎসবের সময় ছাড়, বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ভাড়ায় ছাড় পাওয়া যায়। অনলাইনে ফ্লাইট বুকিং করলে কিছু অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।

ঢাকা টু কক্সবাজার হেলিকপ্টার ভাড়া কত

ঢাকা থেকে কক্সবাজারে হেলিকপ্টার পরিষেবাও পাওয়া যায়। এই পরিষেবাটি সাধারণত উচ্চ মানের এবং প্রাইভেট যাত্রীদের জন্য। হেলিকপ্টার ভাড়ার পরিমাণ সাধারণত ১,৫০,০০০ থেকে ২,৫০,০০০ টাকার মধ্যে হয়। হেলিকপ্টার ভাড়া নির্ধারণের সময় যাত্রীর সংখ্যা, যাত্রার সময়কাল এবং যাত্রার তারিখ গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ঢাকা টু কক্সবাজার হেলিকপ্টার ভাড়া

হেলিকপ্টার সার্ভিস প্রোভাইডার

বেশ কয়েকটি কোম্পানি ঢাকা থেকে কক্সবাজারে হেলিকপ্টার সার্ভিস প্রদান করে। উল্লেখযোগ্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • এসআরএম হেলিকপ্টার সার্ভিস
  • আর জি এভিয়েশন
  • ফ্লাইবাংলা

হেলিকপ্টারে যাত্রা করলে যাত্রীরা আরও আরামদায়ক এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারেন। হেলিকপ্টারে ভ্রমণ একটি বিলাসবহুল উপায় যা সময় বাঁচাতে সহায়ক এবং একটি দারুণ অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

ঢাকা টু কক্সবাজার বিমান ভ্রমণের সুবিধা

বিমান ভ্রমণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল সময় সাশ্রয়। মাত্র ১ ঘন্টা থেকে ১ ঘন্টা ১৫ মিনিটের মধ্যে আপনি ঢাকার ব্যস্ত জীবন থেকে কক্সবাজারের মনোরম পরিবেশে পৌঁছে যেতে পারবেন। এছাড়া বিমানে যাত্রা করার সময় যাত্রীরা আরামদায়ক সিট, খাবার ও বিনোদন সুবিধা পান।

সময় সাশ্রয়
বিমান ভ্রমণ করলে কম সময়ে কক্সবাজারে পৌঁছানো যায়। রাস্তায় যাত্রা করলে যেখানে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে বিমানে সেই পথ মাত্র ১ ঘণ্টায় পাড়ি দেয়া যায়।

আরামদায়ক যাত্রা
বিমানে যাত্রা করলে যাত্রীরা আরও আরামদায়ক ও সহজ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পেতে পারেন। আরামদায়ক সিট, মানসম্পন্ন খাবার ও বিনোদন সুবিধা বিমানে যাত্রীদের যাত্রাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে।

নিরাপত্তা
বিমান ভ্রমণে নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি ও মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করে বিমান কোম্পানিগুলো তাদের যাত্রীদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করে।

দ্রুত ও সহজ চেক-ইন
বিমান ভ্রমণে দ্রুত ও সহজ চেক-ইন প্রক্রিয়া রয়েছে যা যাত্রীদের জন্য সময় ও কষ্ট কমিয়ে দেয়।

ঢাকা টু কক্সবাজার ট্রেন ও বাস সার্ভিস

যারা বিমান ভ্রমণ পছন্দ করেন না তাদের জন্য ট্রেন ও বাস একটি ভালো অপশন। ঢাকা থেকে কক্সবাজারে সরাসরি ট্রেন সার্ভিস এ কক্সবাজার পৌঁছানো যায়। ট্রেনের ভাড়া সাধারণত ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে হয়।

ট্রেন ভ্রমণ
বর্তমানে সরাসরি ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেনের সুবিধা রয়েছে। এছাড়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেন ভ্রমণ করতে পারেন, এরপর চট্টগ্রাম থেকে বাস বা মাইক্রোবাসে করে কক্সবাজার যেতে পারেন। ট্রেনে যাত্রা করলে আপনি আরামদায়ক এবং সাশ্রয়ী ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন।

বাস ভ্রমণ
ঢাকা থেকে কক্সবাজারে বিভিন্ন ধরণের বাস সার্ভিস পাওয়া যায়। এসি বাসের ভাড়া সাধারণত ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা এবং নন-এসি বাসের ভাড়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে থাকে। কিছু জনপ্রিয় বাস কোম্পানির মধ্যে রয়েছে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস আলম, শ্যামলী পরিবহন ইত্যাদি।

কক্সবাজারে পৌঁছানোর পর করণীয়

কক্সবাজারে পৌঁছানোর পর পর্যটকদের জন্য অনেক কিছু করার আছে। কক্সবাজারের প্রধান আকর্ষণ হলো তার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। এছাড়া হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান, ইনানী বিচ, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইত্যাদি স্থানও পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়।

প্রধান আকর্ষণ

  • কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যা পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
  • হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান: পাহাড় এবং ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য একটি আদর্শ স্থান।
  • ইনানী বিচ: শান্ত ও মনোরম পরিবেশের জন্য বিখ্যাত।
  • মহেশখালী দ্বীপ: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্থানীয় সংস্কৃতির মিলিত অভিজ্ঞতা।
  • সেন্ট মার্টিন দ্বীপ: কোরাল দ্বীপ যা অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত।

হোটেল ও রিসোর্ট
কক্সবাজারে অনেক রিসোর্ট ও হোটেল রয়েছে যা পর্যটকদের আরামদায়ক থাকার ব্যবস্থা করে। কিছু জনপ্রিয় হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে রয়েছে:

  • সি-গাল হোটেল
  • হোটেল শৈবাল
  • কক্সবাজার রিসোর্ট
  • সায়মন বিচ রিসোর্ট
  • ওশান প্যারাডাইস হোটেল

স্থানীয় খাবার ও রেস্টুরেন্ট
স্থানীয় খাবারের মধ্যে সি-ফুড বিশেষভাবে জনপ্রিয়। কক্সবাজারের রেস্টুরেন্টগুলোতে বিভিন্ন ধরণের সি-ফুড পাওয়া যায় যা পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ। কিছু জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টের মধ্যে রয়েছে:

  • পেঙ্গুইন রেস্টুরেন্ট
  • কক্স ইনার
  • ধানসিড়ি রেস্টুরেন্ট
  • ওশান ডেলাইট

উপসংহার – ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান ভাড়া

ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান ভ্রমণ একটি সুবিধাজনক ও সময় সাশ্রয়ী উপায়। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণে ভাড়াও বেশ সাশ্রয়ী হয়েছে। বিমানে যাত্রা করলে সময় বাঁচানোর পাশাপাশি যাত্রীরা আরামদায়ক ও নিরাপদ যাত্রা উপভোগ করতে পারেন। তবে যারা ট্রেন বা বাসে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্যও ভালো বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। কক্সবাজারে পৌঁছে সেখানে নানা আকর্ষণ উপভোগ করে একটি স্মরণীয় ভ্রমণ অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব। তাই আপনার পরবর্তী ছুটিতে কক্সবাজার ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন এবং বিমানের সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *