১ কেজি কিসমিসের দাম কত ২০২৪

১ কেজি কিসমিসের দাম কত

কিসমিস আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শুকনো ফল যা প্রায় প্রতিটি পরিবারে পাওয়া যায়। এটি মূলত আঙ্গুর শুকিয়ে তৈরি হয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশেও কিসমিসের ব্যবহার ব্যাপক এবং এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন ধরনের কিসমিস পাওয়া যায় যার মধ্যে কালো ও সোনালি কিসমিস সবচেয়ে বেশি পরিচিত। কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আজকের পোস্টে ১ কেজি কিসমিসের দাম কত তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

কিসমিসের উপকারিতা

কিসমিসের উপকারিতা অনস্বীকার্য। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং মিনারেল। কিসমিস আমাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাহায্য করে।

১. রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য: কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে কিসমিস অত্যন্ত কার্যকর।

২. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: কিসমিসে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে।

৩. দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে: কিসমিসে রয়েছে ভিটামিন এ এবং বিটা-ক্যারোটিন যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি চোখের বিভিন্ন সমস্যার প্রতিরোধে কার্যকর।

৪. হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখে: কিসমিসে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে এবং অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর।

৫. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য: কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

৬. ত্বকের স্বাস্থ্য: কিসমিসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বকের বার্ধক্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে।

১০০ গ্রাম কিসমিসের দাম কত

বর্তমান বাজারে ১০০ গ্রাম কিসমিসের দাম বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং মান অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। সাধারণত ১০০ গ্রাম কিসমিসের দাম ৬০-৮০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বিভিন্ন সুপারমার্কেট এবং অনলাইন শপে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কিসমিসের দাম সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ স্থানীয় বাজারে খুচরা দামে ১০০ গ্রাম কিসমিস ৬০ টাকা এবং বড় সুপারমার্কেটে ১০০ গ্রাম কিসমিসের দাম ৭০ টাকা হতে পারে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন অফার এবং ডিসকাউন্টের সুবিধায় দাম কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।

১ কেজি কিসমিসের দাম কত ২০২৪

২০২৪ সালে ১ কেজি কিসমিসের দাম সাধারণত ৪৫০-৬০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। বাজারের চাহিদা এবং সরবরাহের উপর নির্ভর করে এই দাম পরিবর্তিত হতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে কিসমিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। ভালো মানের কিসমিসের দাম সাধারণত একটু বেশি হয়। উদাহরণস্বরূপ উচ্চ মানের সোনালি কিসমিসের দাম ৭০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে যেখানে সাধারণ মানের কিসমিসের দাম ৪৫০ টাকা হতে পারে। বিভিন্ন উৎস থেকে আমদানির উপরও দাম নির্ভর করে। যেমন তুরস্ক এবং ইরান থেকে আমদানি করা কিসমিসের দাম অন্যান্য উৎস থেকে আসা কিসমিসের তুলনায় বেশি হতে পারে।

বিভিন্ন ধরনের এবং ওজনের কিসমিসের দামের তালিকা

কিসমিসের ধরন ও ওজন  দাম
১০০ গ্রাম সোনালি কিসমিস ৬০ – ৮০ টাকা।
২০০ গ্রাম সোনালি কিসমিস ১০০ – ১৫০ টাকা।
৫০০ গ্রাম সোনালি কিসমিস ২৫০ – ৩৫০ টাকা।
১ কেজি কিসমিসের দাম সোনালি ৪৫০ – ৬০০ টাকা।
১০০ গ্রাম কালো কিসমিস ৭০ – ১০০ টাকা।
২০০ গ্রাম কালো কিসমিস ১২০ – ১৮০ টাকা।
৫০০ গ্রাম কালো কিসমিস ৩০০ – ৪৫০ টাকা।
১ কেজি কালো কিসমিস ৬০০ – ৮০০ টাকা।
১০০ গ্রাম সবুজ কিসমিস ৬০ – ৭৫ টাকা।
২০০ গ্রাম সবুজ কিসমিস ১২০ – ১৪০ টাকা।
৫০০ গ্রাম সবুজ কিসমিস ৩০০ – ৩৮০ টাকা।
১ কেজি সবুজ কিসমিস ৫৫০ – ৭৫০ টাকা।

কিসমিসের পাইকারি দাম

পাইকারি বাজারে কিসমিসের দাম খুচরা বাজারের তুলনায় বেশ কম হয়। ২০২৪ সালে পাইকারি বাজারে ১ কেজি কিসমিসের দাম ৩৫০-৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। পাইকারি কেনাকাটা করলে দাম কিছুটা কম পড়ে এবং বেশি পরিমাণে কেনা যায়। বড় বড় বাজার যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং খুলনা সহ অন্যান্য বড় শহরে পাইকারি বাজার পাওয়া যায়। পাইকারি বাজারে কেনাকাটা করতে চাইলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিত যেমন, মান পরীক্ষা করা, দাম যাচাই করা এবং বিশ্বস্ত সরবরাহকারীর থেকে কেনা। পাইকারি বাজারে বিভিন্ন ধরনের কিসমিস পাওয়া যায় যেমন সোনালি কিসমিস, কালো কিসমিস এবং সবুজ কিসমিস।

ভালো কিসমিস চেনার উপায়

ভালো কিসমিস চেনার জন্য কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখা দরকার:

১. রং: কিসমিসের রং উজ্জ্বল এবং স্বচ্ছ হওয়া উচিত। কালো কিসমিস গাঢ় কালো এবং সোনালি কিসমিস উজ্জ্বল সোনালি রং ধারণ করে।

২. আকার: কিসমিসের আকার সমান হওয়া উচিত। ছোট বা ভাঙা কিসমিস না কেনাই ভালো।

৩. মোলায়েমতা: ভালো কিসমিস মোলায়েম এবং শুকনো হয়। খুব বেশি শক্ত বা খুব বেশি নরম কিসমিস এড়িয়ে চলা উচিত।

৪. গন্ধ: তাজা কিসমিসে সুগন্ধ থাকে যা সহজেই বোঝা যায়। যেকোনো খারাপ গন্ধের কিসমিস না কেনাই ভালো।

৫. স্বাদ: কিসমিসের স্বাদ মিষ্টি এবং তাজা হওয়া উচিত। কোন ধরনের তিক্ততা বা অস্বাভাবিক স্বাদ থাকলে তা না কেনাই ভালো।

কালো কিসমিসের দাম কত

কালো কিসমিসের দাম সোনালি কিসমিসের চেয়ে কিছুটা বেশি হতে পারে। ২০২৪ সালে কালো কিসমিসের দাম ৬০০-৮০০ টাকার মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে। এটি এর মান এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। কালো কিসমিস পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং স্বাস্থ্যকর। বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং উৎপাদক প্রতিষ্ঠান কালো কিসমিস সরবরাহ করে। যার ফলে দাম কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ তুরস্ক এবং ইরান থেকে আমদানিকৃত কালো কিসমিসের দাম স্থানীয় উৎপাদিত কিসমিসের তুলনায় বেশি হতে পারে।

কালো কিসমিস কোথায় পাওয়া যায়

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানীয় বাজার এবং সুপারমার্কেটে কালো কিসমিস সহজে পাওয়া যায়। এছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও কালো কিসমিস পাওয়া যায়। কিছু জনপ্রিয় অনলাইন শপ যেমন দারাজ, চালডাল এবং অন্যান্য ই-কমার্স সাইটে কালো কিসমিস পাওয়া যায়। এছাড়া স্থানীয় বাজার যেমন ঢাকা নিউমার্কেট, চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজারে কালো কিসমিস পাওয়া যায়। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিশেষ ছাড় এবং অফারের সুবিধায় কালো কিসমিস কেনা যায়।

কিসমিস কেনার সেরা স্থান

কিসমিস কেনার জন্য সেরা স্থানগুলোর মধ্যে সুপারমার্কেট, স্থানীয় বড় বাজার এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো অন্তর্ভুক্ত। সুপারমার্কেটে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কিসমিস পাওয়া যায় যা মান যাচাই করা সহজ হয়। স্থানীয় বড় বাজার যেমন ঢাকা নিউমার্কেট, চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজারে ভালো মানের কিসমিস পাওয়া যায়। এছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সহজে ঘরে বসেই কিসমিস কেনা যায়।

কিসমিস সংরক্ষণ ও ব্যবহার

কিসমিস সংরক্ষণের জন্য শুষ্ক এবং ঠান্ডা স্থানে রাখা উচিত। কিসমিস সাধারণত বাতাস মুক্ত কৌটায় সংরক্ষণ করা হয় যাতে তা দীর্ঘ সময় তাজা থাকে। রান্না ও বেকিং-এ কিসমিসের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। বিভিন্ন মিষ্টি, পায়েস, কেক এবং সালাদে কিসমিস ব্যবহার করা হয়।

১. কেক ও পেস্ট্রি: কিসমিস কেক এবং পেস্ট্রিতে একটি বিশেষ স্বাদ যোগ করে। কিসমিস ব্যবহার করে কেকের মধ্যে মিষ্টি এবং খাস্তা একটি অনুভূতি তৈরি হয়।

২. পায়েস: বাঙালি পায়েসে কিসমিসের ব্যবহার প্রচলিত। এটি পায়েসকে আরও মজাদার এবং পুষ্টিকর করে তোলে।

৩. সালাদ: কিসমিস সালাদেও ব্যবহার করা যায়। এটি সালাদকে একটি মিষ্টি এবং ক্রাঞ্চি টেক্সচার প্রদান করে।

৪. নাশতা: কিসমিস দই, সেরিয়াল বা ওটমিলের সাথে মিশিয়ে নাশতায় ব্যবহার করা যায়। এটি নাশতাকে আরও পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু করে তোলে।

কিসমিসের বিকল্প এবং অন্যান্য শুকনো ফল

কিসমিসের পাশাপাশি অন্যান্য শুকনো ফল যেমন খেজুর, বাদাম এবং শুকনো এপ্রিকটও জনপ্রিয়। এই ফলগুলো পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং স্বাস্থ্যকর। বিভিন্ন রান্না এবং মিষ্টিতে এগুলোর ব্যবহার করা যায়।

১. খেজুর: খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

২. বাদাম: বাদাম প্রোটিন, ভিটামিন ই এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৩. শুকনো এপ্রিকট: শুকনো এপ্রিকটে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ফাইবার থাকে। এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং চোখের জন্য উপকারী।

উপসংহার – ১ কেজি কিসমিসের দাম কত

আশা করা যায় এই আর্টিকেলটি আপনাকে কিসমিসের বর্তমান বাজার দাম, উপকারিতা এবং কেনার সেরা স্থানের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করবে। কিসমিস কেনার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং বাজারের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ পূর্বাভাসের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিন। কিসমিস একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান যা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এর পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্যের উপকারিতা বিবেচনা করে এটি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বাজারে বিভিন্ন ধরনের কিসমিস পাওয়া যায় এবং সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে এটি দীর্ঘ সময় তাজা থাকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *