এলার্জি এবং অন্যান্য সংবেদনশীলতা সংক্রান্ত সমস্যায় অনেকেই কষ্ট পেয়ে থাকেন। এই ধরনের সমস্যা সমাধানে হিস্টাসিন ট্যাবলেট ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের বাজারে হিস্টাসিন ট্যাবলেটের বর্তমান দাম এর কাজ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সঠিক ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হবে। ২০২৪ সালের হিস্টাসিন ট্যাবলেট এর দাম কত হতে পারে তা নিয়েও তথ্য প্রদান করা হবে।
হিস্টাসিন ট্যাবলেট এর কাজ কি
হিস্টাসিন ট্যাবলেট মূলত একটি অ্যান্টিহিস্টামিন যা এলার্জি এবং সংবেদনশীলতা কমাতে সাহায্য করে। এর সক্রিয় উপাদান হলো ক্লোরফেনিরামিন মেলিয়েট। এটি শরীরে হিস্টামিন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। যা এলার্জি সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
হিস্টামিন শরীরের বিভিন্ন স্থানে রিসেপ্টরস নামে একটি সাইটে কাজ করে এবং এলার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। হিস্টাসিন এই রিসেপ্টরসগুলোকে ব্লক করে এবং এলার্জি লক্ষণগুলো হ্রাস করে। এর ফলে চুলকানি, সর্দি, চোখের পানি পড়া এবং অন্যান্য এলার্জি সংক্রান্ত লক্ষণগুলো হ্রাস পায়।
হিস্টাসিন ট্যাবলেট এর দাম কত
বাংলাদেশে হিস্টাসিন ট্যাবলেটের ইউনিট মূল্য বর্তমানে ০.৩০ টাকা। একটি স্ট্রিপে ১০টি ট্যাবলেট থাকে যার দাম ৩ টাকা। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানি এই ট্যাবলেট তৈরি করে তাই দামের একটু তারতম্য হতে পারে। ২০২৩ সালে এই ট্যাবলেটের দাম ছিল প্রায় একই।
তবে ২০২৪ সালে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও বাজার পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে দামে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। চিকিৎসা খাতে সাধারণত ঔষধের দাম পরিবর্তন হতে থাকে বিভিন্ন কারণের জন্য যেমন কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং ট্যাক্স। হিস্টাসিন ট্যাবলেটের ক্ষেত্রে এই সব কারণ সমানভাবে প্রযোজ্য।
হিস্টাসিন ট্যাবলেট প্রাইস ইন বাংলাদেশ
বাংলাদেশের বিভিন্ন ফার্মেসি এবং অনলাইন স্টোরে হিস্টাসিন ট্যাবলেট পাওয়া যায়। শহরভেদে এর দামে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। ঢাকার ফার্মেসি গুলোতে হিস্টাসিন ট্যাবলেট প্রায় একই দামে পাওয়া যায়।কিন্তু ছোট শহর এবং গ্রামের ফার্মেসি গুলোতে দামে কিছুটা হেরফের হতে পারে।
অনলাইন স্টোরগুলোর মাধ্যমে অর্ডার করলে দামের সাথে কিছুটা ডেলিভারি চার্জ যোগ হতে পারে। এটি সুবিধাজনক হলেও অনলাইন ক্রয় ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যথাযথ প্রমাণিত এবং বিশ্বস্ত অনলাইন ফার্মেসি থেকে ক্রয় করা উচিৎ।
হিস্টাসিন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
হিস্টাসিন ট্যাবলেট খাওয়ার সঠিক নিয়ম হলো দৈনিক ১-২ বার খাবারের সাথে বা খাবারের পরে গ্রহণ করা। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন সর্বাধিক ৮ মিলিগ্রাম ডোজ সুপারিশ করা হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ডোজ কমিয়ে নেওয়া উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। শিশুরা সাধারণত প্রতিদিন ১-২ মিলিগ্রাম ডোজ গ্রহণ করতে পারে। তবে এর পরিমাণ শিশুর ওজন এবং বয়স অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। ডাক্তারের নির্দেশনা ছাড়া ডোজ পরিবর্তন করা উচিত নয়।
হিস্টাসিন ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
হিস্টাসিন ট্যাবলেট ব্যবহারের সময় কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে যেমন ঘুম ঘুম ভাব, শুষ্ক মুখ, মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাব। গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র এলার্জিক প্রতিক্রিয়া, শ্বাসকষ্ট এবং বুকের ব্যথা। এই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
এছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে হিস্টাসিন ব্যবহারের ফলে স্নায়ুর সমস্যাও দেখা যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের ফলে লিভার ও কিডনির সমস্যাও হতে পারে। এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য যদি কেউ আগে থেকেই লিভার বা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন।
হিস্টাসিন ট্যাবলেট এর সুবিধা
হিস্টাসিন ট্যাবলেট এলার্জি এবং সংবেদনশীলতা সমস্যার জন্য খুবই কার্যকর। এটি তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং সহজলভ্য। অন্য অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধের তুলনায় হিস্টাসিন কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এছাড়াও এটি দ্রুত কাজ করে এবং দীর্ঘ সময় ধরে প্রভাব ফেলে। হিস্টাসিনের সুবিধার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য হলো এর কার্যকারিতা।
এটি অন্যান্য অ্যান্টিহিস্টামিনের তুলনায় বেশি কার্যকর এবং কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত। এছাড়া এটি স্নায়ু শিথিল করতে সাহায্য করে যা ঘুমের জন্য উপকারী হতে পারে।
হিস্টাসিন ট্যাবলেট এর বিকল্প
বাজারে হিস্টাসিন ট্যাবলেটের বিকল্প হিসেবে অনেক ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ পাওয়া যায়। যেমন লোরাটাডিন, সিটরিজিন এবং ফেক্সোফেনাডিন। এই ওষুধগুলোর কার্যকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখলে হিস্টাসিন ট্যাবলেট অনেকের জন্যই সুবিধাজনক হতে পারে।
লোরাটাডিন এবং সিটরিজিন সাধারণত কম ঘুম ঘুম ভাব সৃষ্টি করে তবে এদের দাম কিছুটা বেশি হতে পারে। অন্যদিকে ফেক্সোফেনাডিনও একটি কার্যকর অ্যান্টিহিস্টামিন যা কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
হিস্টাসিন ট্যাবলেট কেনা যাবে কোথায়
বাংলাদেশের প্রায় সব ফার্মেসিতে হিস্টাসিন ট্যাবলেট পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন স্টোরেও এই ট্যাবলেট পাওয়া যায়। অনলাইন স্টোর থেকে কেনার সময় সতর্ক থাকতে হবে এবং শুধুমাত্র নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত সাইট থেকে অর্ডার করতে হবে। অনলাইন স্টোরগুলো যেমন মেদেক্স, হেলথকেয়ার ফার্মেসি এবং ধানমন্ডি ফার্মেসি থেকে সহজেই হিস্টাসিন ট্যাবলেট অর্ডার করা যায়। তবে অনলাইন কেনাকাটার সময় ভেজাল ওষুধের প্রতি সতর্ক থাকা উচিত।
ডাক্তারের পরামর্শ
হিস্টাসিন ট্যাবলেট ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। বিশেষ করে যদি আপনি কোন দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন বা অন্য কোন ওষুধ সেবন করছেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডোজ এবং ব্যবহারের নিয়ম মানা উচিত। এটি বিশেষ করে প্রযোজ্য যদি আপনি গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মা হন। কেননা এই সময়ে ওষুধ ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
উপসংহার – হিস্টাসিন ট্যাবলেট এর দাম কত
হিস্টাসিন ট্যাবলেট এলার্জি এবং সংবেদনশীলতা সমস্যার সমাধানে একটি কার্যকর ও সহজলভ্য ওষুধ। সঠিক ডোজ এবং ব্যবহারের নিয়ম মেনে চললে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হয়। বাজারের বর্তমান দাম এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য পরিবর্তন সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরি। যেকোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে বা কোন সন্দেহ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
এই আর্টিকেলটি আপনাদের হিস্টাসিন ট্যাবলেট সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য প্রদান করবে এবং সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করবে। আশা করি এটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে এবং আপনারা সঠিক তথ্য পেয়ে হিস্টাসিন ট্যাবলেট ব্যবহার করতে পারবেন।