দেবদারু গাছ যাকে বৈজ্ঞানিকভাবে Poliathia longifolia বলা হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশগত গুরুত্বের জন্য একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে। এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষত বাংলাদেশে দেবদারু গাছ ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। এর শাখার সরলতা, পাতার উজ্জ্বল সবুজ রং এবং ঔষধি গুণাবলী একে একটি জনপ্রিয় বৃক্ষে পরিণত করেছে। এই গাছটি শুধুমাত্র তার চমৎকার সৌন্দর্যের জন্য নয় বরং তার পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক গুরুত্বের জন্যও মূল্যবান। চলুন দেবদারু গাছের চারার দাম, দেবদারু গাছের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।
দেবদারু গাছের বৈশিষ্ট্য
দেবদারু গাছের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর উচ্চতা এবং সরল শাখা। এটি সাধারণত ৩০-৫০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত বেড়ে উঠতে পারে এবং তার শাখাগুলো সরল এবং উল্লম্ব থাকে। গাছটির পাতা লম্বা, সরু এবং উজ্জ্বল সবুজ যা একটি আকর্ষণীয় রূপ দেয়। বসন্তকালে ছোট সাদা ফুল ফোটে যা গাছটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। দেবদারু গাছের ফল ছোট এবং কালো রঙের হয়।
দেবদারু গাছের ঔষধি গুণাবলী প্রাচীনকাল থেকে পরিচিত। এর পাতা এবং বাকল থেকে প্রাপ্ত উপাদান বিভিন্ন রোগ যেমন কাশি, জ্বর এবং ত্বকের সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। গাছের শারীরিক ও ঔষধি গুণাবলী একে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
দেবদারু গাছের দাম
দেবদারু গাছের দাম নির্ভর করে গাছের আকার, বয়স এবং প্রাপ্যতার উপর। সাধারণত বড় এবং পরিপক্ক গাছের দাম বেশি হয় যেখানে ছোট এবং নবীন গাছের দাম তুলনামূলকভাবে কম হয়। গাছের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে গাছের শারীরিক অবস্থা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিবহন খরচও বিবেচনা করা হয়। বাজারে দেবদারু গাছের দাম ১০০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে, তবে এটি অঞ্চলের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে।
দেবদারু গাছের চারার দাম ২০২৪
২০২৪ সালে দেবদারু গাছের চারার দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নার্সারীগুলোতে চারার প্রাপ্যতা কমে যেতে পারে যার ফলে দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে দাম বৃদ্ধি হলেও এটি এখনও একটি সাশ্রয়ী গাছ হিসেবে রয়ে যাবে। সাধারণত একটি দেবদারু গাছের চারার দাম ৫০-১০০ টাকার মধ্যে হতে পারে তবে বিশেষ কিছু এলাকায় এটি ১৫০ টাকাও হতে পারে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দেবদারু গাছের চারার দাম
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দেবদারু গাছের চারার দাম বিভিন্ন হতে পারে। ঢাকায় চারার দাম সাধারণত অন্যান্য স্থানের চেয়ে বেশি হয়। ঢাকার বিভিন্ন নার্সারীতে দেবদারু গাছের চারা ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। চট্টগ্রামে এই দাম কিছুটা কম প্রায় ৭০-১২০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। অন্যান্য প্রধান শহরগুলোতে যেমন রাজশাহী, খুলনা এবং সিলেটে দেবদারু গাছের চারার দাম ৫০-১০০ টাকার মধ্যে থাকে। গ্রামাঞ্চলে দাম আরও কম হতে পারে যা প্রায় ৩০-৫০ টাকা হতে পারে।
দেবদারু গাছের চারা কোথায় পাওয়া যায়
দেবদারু গাছের চারা বাংলাদেশের বিভিন্ন নার্সারী এবং গার্ডেন সেন্টারে পাওয়া যায়। ঢাকার মিরপুর, উত্তরা এবং গাবতলী এলাকায় অনেক নার্সারী রয়েছে যেখানে আপনি সহজেই দেবদারু গাছের চারা কিনতে পারেন। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এবং খুলশী এলাকায়ও অনেক নার্সারী রয়েছে যেখানে দেবদারু গাছের চারা পাওয়া যায়।
রাজশাহী, খুলনা, সিলেট সহ অন্যান্য শহরেও অনেক নার্সারী রয়েছে। এছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতেও দেবদারু গাছের চারা পাওয়া যায়। বেশ কিছু ই-কমার্স সাইটে আপনি দেবদারু গাছের চারা অর্ডার করতে পারেন এবং বাড়িতে বসেই তা সংগ্রহ করতে পারেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে দাম কিছুটা বেশি হতে পারে তবে তা সঠিক এবং স্বাস্থ্যবান চারা সরবরাহ করে।
দেবদারু গাছের চারা কেনার সময় করণীয়
দেবদারু গাছের চারা কেনার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত। প্রথমত আপনি যে নার্সারী থেকে চারা কিনছেন সেটি নির্ভরযোগ্য কিনা তা যাচাই করুন। চারা সঠিকভাবে রোপণ করা হয়েছে কিনা এবং তা স্বাস্থ্যবান কিনা তা নিশ্চিত করুন। চারা কিনে নিয়ে আসার পর তা রোপণের উপযুক্ত সময় এবং পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন।
সাধারণত বর্ষাকাল চারা রোপণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। রোপণের আগে মাটি ভালভাবে প্রস্তুত করে নিন এবং প্রয়োজনীয় সার ব্যবহার করুন। চারা রোপণের পর নিয়মিত পানি দেওয়া এবং মাটি পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দেবদারু গাছের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ
দেবদারু গাছের সঠিক পরিচর্যা এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। গাছটি রোপণের পর নিয়মিত পানি দেওয়া উচিত তবে অতিরিক্ত পানি দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। গাছের চারপাশের মাটি পরিষ্কার রাখা উচিত এবং প্রয়োজনে সার ব্যবহার করা উচিত।
দেবদারু গাছের পাতা এবং শাখা নিয়মিত ছাঁটাই করতে হবে যাতে গাছটি সুস্থ এবং সুন্দর থাকে। এছাড়া কীটপতঙ্গ এবং রোগবালাই থেকে গাছ রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় ছাঁটাই এবং পরিষ্কার করা হলে গাছটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং আরও সুন্দর দেখায়।
দেবদারু গাছের পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব
দেবদারু গাছ পরিবেশের জন্য খুবই উপকারী। এটি বাতাসের মান উন্নত করতে সাহায্য করে এবং শব্দ দূষণ কমাতে সহায়ক। এছাড়া দেবদারু গাছ পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে এবং মাটির ক্ষয় রোধ করে। গাছের পাতাগুলো বাতাসের ধূলিকণা এবং অন্যান্য দূষণ শোষণ করে যা বাতাসের গুণমান উন্নত করে। এছাড়া দেবদারু গাছ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক যা শহুরে অঞ্চলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থনৈতিকভাবে দেবদারু গাছের চারা এবং গাছ বিক্রি থেকে আয় করা যায়। নার্সারী এবং গার্ডেন সেন্টারগুলোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক পণ্য। দেবদারু গাছের কাঠও অর্থনৈতিক দিক থেকে মূল্যবান। এটি আসবাবপত্র নির্মাণ সামগ্রী এবং অন্যান্য কাঠের পণ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই গাছটি কাগজ উৎপাদনেও ব্যবহৃত হয় যা কাগজ শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দেবদারু গাছের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
দেবদারু গাছের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বও কম নয়। এটি অনেক ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক উৎসবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি একটি পবিত্র বৃক্ষ। বিভিন্ন পুজা এবং উৎসবে দেবদারু গাছের পাতা এবং ফুল ব্যবহৃত হয়। গ্রামাঞ্চলে দেবদারু গাছ সামাজিক জমায়েতের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গাছের ছায়ায় গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
দেবদারু গাছের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
দেবদারু গাছের ঔষধি গুণাবলী একে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসম্পদ করে তুলেছে। গাছের পাতা এবং বাকল থেকে প্রাপ্ত উপাদান কাশি, জ্বর, ত্বকের সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়া গাছের পাতা এবং ফুলের নির্যাস বিভিন্ন ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় দেবদারু গাছের বাকল এবং পাতার নির্যাস বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
উপসংহার – দেবদারু গাছের চারার দাম
দেবদারু গাছ একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সুন্দর বৃক্ষ যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে। ২০২৪ সালে দেবদারু গাছের চারার দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে তবে এটি এখনো একটি সাশ্রয়ী এবং উপকারী গাছ। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে দেবদারু গাছের চারা পাওয়া যায় এবং সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এটি সহজেই বড় করা যায়। দেবদারু গাছের গুরুত্ব এবং সংরক্ষণ আমাদের পরিবেশের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় এবং ভবিষ্যতে এটি আরও জনপ্রিয়তা অর্জন করবে।