কালার বার্ড মুরগির বাচ্চার দাম কত ২০২৫

কালার বার্ড মুরগির বাচ্চা

বাংলাদেশে খামারিদের মধ্যে কালার বার্ড মুরগির বাচ্চার চাহিদা ২০২৫ সালে আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে যারা সীমিত জায়গায় বা মাঝারি আকারের পোল্ট্রি খামার পরিচালনা করেন, তাদের কাছে এই জাতের মুরগি এখন একটি লাভজনক বিকল্প।

ডিম ও মাংস দুটিতেই ভালো উৎপাদন এবং কম রোগপ্রবণতার কারণে কালার বার্ড মুরগি বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব ২০২৫ সালের কালার বার্ড মুরগির বাচ্চার সর্বশেষ বাজার দর, দাম বৃদ্ধির কারণ, বিভিন্ন অঞ্চলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং খামারিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।


Table of Contents

কালার বার্ড মুরগি কি? (Color Bird মুরগির পরিচিতি)

কালার বার্ড মুরগি হলো একটি উন্নতমানের হাইব্রিড মুরগি, যা রঙিন পালকের জন্য পরিচিত এবং দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি উৎপাদনেও কার্যকর।

প্রধান বৈশিষ্ট্য:

  • বছরে গড়ে ২০০–২৫০টি ডিম দিতে সক্ষম

  • প্রতিটি পূর্ণ বয়স্ক মুরগির ওজন হয় ২.৫–৩.৫ কেজি

  • মাংসের গঠন টাইট ও নরম

  • দ্রুত বর্ধনশীল জাত

  • স্থানীয় আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সক্ষম

  • রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি


২০২৫ সালে কালার বার্ড মুরগির বাচ্চার দাম (আপডেটেড তালিকা)

২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত বাজার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, কালার বার্ড মুরগির বাচ্চার দাম কিছুটা বেড়েছে। খাদ্য, পরিবহন, এবং চিকিৎসা খরচ বৃদ্ধির কারণে বাচ্চার উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে।

অঞ্চল সর্বনিম্ন দাম (প্রতি পিস) সর্বোচ্চ দাম (প্রতি পিস) গড় দাম
ঢাকা ৭৫ টাকা ৯০ টাকা ৮২ টাকা
চট্টগ্রাম ৭০ টাকা ৮৫ টাকা ৭৮ টাকা
রাজশাহী ৬৫ টাকা ৮০ টাকা ৭২ টাকা
খুলনা ৬৫ টাকা ৭৮ টাকা ৭০ টাকা
রংপুর ৬০ টাকা ৭৫ টাকা ৬৮ টাকা

নতুন বনাম পুরাতন দামের তুলনা:

বছর গড় দাম (প্রতি পিস)
২০২৪ ৬৫ টাকা
২০২৫ ৭৮ টাকা

দামের বৃদ্ধি: প্রায় ২০%+

দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ:

  • ব্রয়লার ফিড ও মুরগির খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে

  • চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন খরচের পরিমাণ বেড়েছে

  • অধিক চাহিদা ও সীমিত সরবরাহ

  • পরিবহন ব্যয়ের বৃদ্ধি


খামারিরা কেন এই সময় কিনবেন?

বর্তমানে (জুলাই ২০২৫) দাম কিছুটা বাড়লেও সরবরাহ স্থিতিশীল থাকায় এবং ডিম ও মাংসের বাজার ভালো থাকায় এখনই খামার শুরু করার উপযুক্ত সময়। দাম সাময়িকভাবে বাড়লেও বছর শেষে সরবরাহ বেড়ে গেলে তা কমে যেতে পারে।


বিকল্প জাতের মুরগির বাচ্চার দাম ২০২৫ (তুলনামূলক টেবিল)

জাত গড় দাম (প্রতি পিস) ব্যবহারের ধরন
কালার বার্ড ৭৮ টাকা ডিম ও মাংস দুটো
কক-৭৬ ৮৫ টাকা মাংসপ্রধান
লেয়ার ৩৫-৪৫ টাকা ডিমপ্রধান
সোনালি ৬৫-৭০ টাকা ডিম ও মাংস

কালার বার্ড মুরগির খামার করার সুবিধা (২০২৫ সালের পরিপ্রেক্ষিতে)

২০২৫ সালে বাংলাদেশে পোল্ট্রি খাতে প্রতিযোগিতা যেমন বেড়েছে, তেমনি লাভজনক জাতের মুরগির চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে কালার বার্ড মুরগি পালন একটি বুদ্ধিদীপ্ত ও লাভজনক সিদ্ধান্ত হতে পারে।

কী কারণে কালার বার্ড খামার লাভজনক:

  • দ্রুত বর্ধনশীল: মাত্র ৮-১০ সপ্তাহে বাজারজাতযোগ্য হয়ে ওঠে।

  • ডিম ও মাংস দুটোতেই উৎপাদন: একই সাথে ডিম ও মাংস বিক্রি করে আয়ের পথ বিস্তৃত হয়।

  • রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা: সাধারণ ব্রয়লার বা লেয়ার জাতের তুলনায় তুলনামূলক কম রোগাক্রান্ত হয়।

  • খাবার খরচের সাশ্রয়: একক উৎপাদন না হয়ে ডুয়াল পারপাস হওয়ায় খাদ্য বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে বেশি রিটার্ন দেয়।

একজন খামারি যদি ১০০টি কালার বার্ড বাচ্চা পালন করেন এবং সঠিকভাবে পরিচর্যা করেন, তবে ৩ মাসের মধ্যেই লাভের মুখ দেখতে পারেন। অনেক খামার ইতিমধ্যেই প্রতি মাসে ১৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন।


কোথা থেকে কিনবেন আসল কালার বার্ড মুরগির বাচ্চা?

বর্তমানে বাজারে নকল বা কম মানের কালার বার্ড বাচ্চার সরবরাহ বেড়েছে, যার ফলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তাই নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নির্ভরযোগ্য উৎস:

  • সরকারি খামার (DOF অনুমোদিত): কিছু সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত খামারে সনদপ্রাপ্ত বাচ্চা পাওয়া যায়।

  • বড় ব্রিডার ফার্ম (যেমনঃ Kazi Farms, Nahar Agro): যারা সরাসরি চুক্তিভিত্তিক খামারিদের সরবরাহ করে।

  • বিশ্বস্ত স্থানীয় খামারি: যারা ২–৩ বছর ধরে একই জাতের উৎপাদন ও বিক্রি করে আসছেন।

আসল বাচ্চা চেনার উপায়:

  • পালক সাধারণত গাঢ় ও চকচকে হয়

  • চোখ উজ্জ্বল এবং পা-নাড়াচড়া সক্রিয় হয়

  • বাচ্চা তুলনামূলক ভারী ও দৃঢ় হয়


কালার বার্ড মুরগির বাচ্চা পালনের আধুনিক কৌশল

সঠিক কৌশলে পালন করলে বাচ্চাগুলোর মৃত্যুহার কমে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করা হলো:

খাদ্য ব্যবস্থাপনা:

  • প্রথম ২১ দিন ব্রয়লার স্টার্টার ফিড দেওয়া উত্তম

  • পরে গ্রোয়ার ফিডমাল্টি ভিটামিন সপ্তাহে ২ বার

  • মাঝে মাঝে রসুন ও লবণ পানিতে মিশিয়ে দিলে পরিপাকতন্ত্র ভালো থাকে

পরিবেশ ও পরিচর্যা:

  • প্রথম সপ্তাহে তাপমাত্রা ৩২–৩৫°C রাখুন

  • ভালো বায়ু চলাচল এবং খাঁচার নিচে শুকনো বালি বা কাঠের গুঁড়ো রাখুন

  • খাঁচা প্রতিদিন পরিষ্কার করুন ও সপ্তাহে একবার জীবাণুনাশক ছিটান

ভ্যাকসিনেশন সময়সূচি (সংক্ষিপ্ত রূপরেখা):

বয়স ভ্যাকসিন নাম রোগ প্রতিরোধ
৫-৭ দিন BCRDV নিউক্যাসল
১৪ দিন Gumboro গামবোরো
২১ দিন ND+IB নিউক্যাসল ও ইনফেকশাস ব্রঙ্কাইটিস
৩০ দিন Fowl Pox চিকেন পক্স

এছাড়াও স্থানীয় পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে কাস্টম টিকা দেওয়া যেতে পারে।


কালার বার্ড মুরগির বাজার চাহিদা ও ভবিষ্যত মূল্য প্রবণতা (২০২৫)

বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে ২০২৫ সালে যে বিষয়টি লক্ষণীয়, তা হলো ডুয়াল পারপাস মুরগির প্রতি খামারিদের আগ্রহ বেড়েছে। কারণ, শুধুমাত্র ডিম বা শুধুমাত্র মাংস নির্ভর জাতের পরিবর্তে এমন জাত এখন চাওয়া হচ্ছে যেটি দুটি দিকেই আয় আনতে পারে।

মূল্য প্রবণতা বিশ্লেষণ:

  • মার্চ–এপ্রিল মাসে চাহিদা কম থাকলেও জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চাহিদা বাড়ে (কুরবানির পশুর প্রস্তুতির সময়)

  • ফিডের দাম ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ১২–১৫% বেড়েছে, যার প্রভাব বাচ্চার দামে পড়েছে

  • যদি আমদানি না বাড়ে এবং সরবরাহ সীমিত থাকে, তবে আগামী ৩ মাসে বাচ্চার দাম আরও ৮–১০% বাড়তে পারে

বাজার চাহিদা বৃদ্ধির কারণ:

  • গ্রামীণ এলাকায় নতুন খামার স্থাপন

  • ডিম ও মাংসের বাজারে কালার বার্ডের বিশেষ চাহিদা

  • হাটে বিক্রির সময় ক্রেতারা রঙিন পালকবিশিষ্ট মুরগিকে বেশি পছন্দ করেন

কালার বার্ড মুরগির বাচ্চার সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা ও প্রতিরোধ (২০২৫ অনুযায়ী)

যদিও কালার বার্ড মুরগি অন্যান্য জাতের তুলনায় কম রোগে আক্রান্ত হয়, তারপরও সঠিক পরিচর্যার অভাবে নানা রোগে ভোগার ঝুঁকি থাকে। এই সমস্যা মূলত দেখা যায় যখন খামারে তাপমাত্রা, খাবার, পানি বা পরিবেশের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ রাখা হয় না।

সাধারণ রোগসমূহ:

  • নিউক্যাসল রোগ (Ranikhet)

  • গাম্বোরো রোগ

  • চিকেন কলেরা

  • Fowl Pox (চামড়ায় গুটি পড়া)

  • শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা (CRD)

প্রতিরোধ কৌশল:

  • সময়মতো ভ্যাকসিন প্রয়োগ করুন (আগের টেবিল অনুযায়ী)

  • খাঁচা ও পরিবেশ প্রতিদিন পরিষ্কার রাখুন

  • প্রতি সপ্তাহে খামারে জীবাণুনাশক স্প্রে করুন

  • পানির সঙ্গে নিয়মিত ইলেকট্রোলাইট, ভিটামিন C ও সালাইন দিন

  • রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

টিপস: ২–৩ দিন পর পর বাচ্চার পায়খানা এবং চোখ/ঠোঁট পর্যবেক্ষণ করুন। যদি কোনো বাচ্চা আলাদা হয়ে থাকে বা দুর্বল দেখা যায়, আলাদা খাঁচায় রেখে চিকিৎসা দিন।


বিভিন্ন অঞ্চলের কালার বার্ড বাচ্চার দাম তুলনা (জুলাই ২০২৫)

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কালার বার্ড মুরগির বাচ্চার দাম কিছুটা ভিন্ন হয়। এর পেছনে কারণ হলো পরিবহন খরচ, স্থানীয় চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি।

অঞ্চল গড় দাম (প্রতি পিস) মন্তব্য
ঢাকা ৮২ টাকা বেশি চাহিদা ও ব্র্যান্ডেড ফার্ম
চট্টগ্রাম ৭৮ টাকা স্থিতিশীল সরবরাহ
রাজশাহী ৭২ টাকা কিছুটা কম দাম
খুলনা ৭০ টাকা সরবরাহকারী কম
বরিশাল ৬৮ টাকা আংশিক স্থানীয় উৎস
রংপুর ৬৮ টাকা কম উৎপাদন ও মধ্যম চাহিদা
ময়মনসিংহ ৭৫ টাকা বড় খামারিদের কারণে দাম কিছুটা বেশি

বিশেষ তথ্য: গ্রামে যারা স্থানীয় ব্রিডারদের কাছ থেকে কিনে থাকেন, তারা সাধারণত ৫–৭ টাকা কম দামে বাচ্চা সংগ্রহ করতে পারেন।


কালার বার্ড মুরগির মাংস ও ডিমের বাজার মূল্য (২০২৫)

কালার বার্ড মুরগি কেবল বাচ্চার বাজারেই নয়, পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় এর মাংস ও ডিমের বাজারেও চাহিদা বেশি। ২০২৫ সালে সাধারণ ব্রয়লার বা সোনালি মুরগির তুলনায় কালার বার্ডের দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

মাংসের দাম (জুলাই ২০২৫):

  • হাট ও রিটেইল দোকানে গড় মূল্য: ৩০০–৩৪০ টাকা প্রতি কেজি

  • ফার্ম থেকে বিক্রি করলে: ২৮০–৩০০ টাকা প্রতি কেজি

ডিমের দাম:

  • হোলসেল বাজারে: ৯–১০ টাকা প্রতি পিস

  • রিটেইল দোকানে: ১০–১১ টাকা প্রতি পিস

দাম বৃদ্ধির কারণ:

  • ভোক্তাদের রঙিন মুরগির প্রতি আগ্রহ

  • মাংসের গঠন বেশি ফ্লেভারফুল

  • ডিমের আকার ও গুণগত মান ভালো

খামারিরা যদি প্রতি মাসে গড়ে ২০০টি মুরগি বাজারজাত করেন, তাহলে শুধুমাত্র মাংস থেকেই মাসে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় সম্ভব। পাশাপাশি ডিম থেকেও গড়ে ১০,০০০–১৫,০০০ টাকা আয় হতে পারে।


উপসংহার: এখনই কি কালার বার্ড খামার শুরু করা উচিত?

হ্যাঁ, এখনই সঠিক সময়। কারণ:

  • বাজারে চাহিদা বাড়ছে

  • দাম এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে

  • সরবরাহ স্থিতিশীল

  • খাদ্যের দাম সামান্য বেড়েছে, তবে লাভের হার এখনও ভালো

রিকমেন্ডেশন:

  • নতুন খামারিরা ৫০–১০০ বাচ্চা দিয়ে শুরু করুন

  • শুধু ফিড নির্ভর না হয়ে ঘরোয়া খাদ্য (ভাত, কলাই গুঁড়া, চালের কুড়া) ব্যবহার করুন

  • প্রতিদিন অন্তত ১ বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও খাঁচা পরিষ্কার করুন


প্রশ্নোত্তর (FAQ)

প্রশ্ন ১: কালার বার্ড মুরগির বাচ্চা কতদিনে বিক্রির উপযুক্ত হয়?
উত্তর: সাধারণত ৮–১০ সপ্তাহে ১.৫–২ কেজি ওজন হয়ে যায়, তখনই বিক্রির উপযুক্ত হয়।

প্রশ্ন ২: কালার বার্ড মুরগি কি গৃহস্থালী খামারে পালন উপযোগী?
উত্তর: হ্যাঁ, যেহেতু এই জাত কম রোগাক্রান্ত হয় এবং কম জায়গাতেও পালন করা যায়।

প্রশ্ন ৩: এ জাতের মুরগির জন্য কোন ফিড সবচেয়ে ভালো?
উত্তর: ব্রয়লার স্টার্টার ফিড (প্রথম ২১ দিন), এরপর Grower এবং Finisher ফিড। প্রয়োজনে স্থানীয় খাদ্য ব্যবহার করলেও ভিটামিন ও মিনারেল যোগ করতে হবে।

সর্বশেষ হালনাগাদ: ১৩ জুলাই ২০২৫।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *