কাঠগোলাপ যা প্লুমেরিয়া নামেও পরিচিত। একটি জনপ্রিয় ফুলগাছ যা তার সুন্দর এবং সুগন্ধি ফুলের জন্য বিখ্যাত। এটি বিশেষ করে বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কাঠগোলাপ গাছ বিভিন্ন রঙের ফুল ফোটায় এবং এটি সারা বছরই ফুল ফোটাতে সক্ষম। যা এটিকে বাগানপ্রেমীদের মাঝে অত্যন্ত প্রিয় করে তুলেছে। এই গাছটি শুধুমাত্র তার সৌন্দর্য নয়, এর স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত উপকারিতার জন্যও বিখ্যাত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালে কাঠগোলাপ গাছের দাম, এর প্রকারভেদ এবং এর পরিচর্যা নিয়ে একটি বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
কাঠগোলাপ কত প্রকার
কাঠগোলাপ গাছ প্রধানত তিনটি প্রকারে বিভক্ত প্লুমেরিয়া রুবরা, প্লুমেরিয়া অলবা এবং প্লুমেরিয়া পুডিকা। প্লুমেরিয়া রুবরা গাছের ফুলগুলো লাল, গোলাপি ও সাদা রঙের হয়। এই গাছগুলো সাধারণত বড় আকারের ফুল ফোটায় এবং তাদের গন্ধ খুবই মিষ্টি। প্লুমেরিয়া অলবা গাছ সাদা রঙের ফুল ফোটায় যা দেখতে খুবই সুন্দর এবং এর গন্ধও মনোরম। প্লুমেরিয়া পুডিকা গাছের ফুলগুলো হলুদ রঙের হয় এবং এটির পাতা অন্যান্য প্রকারের তুলনায় পাতলা হয়। প্রতিটি প্রকারের গাছের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য রয়েছে যা তাদের আলাদা পরিচিতি দেয়।
কাঠগোলাপ গাছের দাম ২০২৪
২০২৪ সালে কাঠগোলাপ গাছের দাম কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন নার্সারিতে কাঠগোলাপ গাছের চারা সাধারণত ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ মিরপুর ১ এর গার্ডেন সেন্টারে কাঠগোলাপ গাছের চারাগুলো সাধারণত ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। অন্যদিকে পূর্ণাঙ্গ গাছের দাম ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। কিছু বিশেষ ধরনের বা বিরল প্রজাতির কাঠগোলাপ গাছের দাম আরও বেশি হতে পারে।
অন্যান্য বড় শহরগুলোতে যেমন চট্টগ্রাম, সিলেট এবং রাজশাহীতে কাঠগোলাপ গাছের দাম কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। সেখানকার নার্সারিগুলোতে চারার দাম ২০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে হতে পারে এবং পূর্ণাঙ্গ গাছের দাম ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন Daraz, Evaly এবং PriyoShop-এ কাঠগোলাপ গাছের চারা অর্ডার করা যায় যেখানে দাম কিছুটা বেশি হতে পারে প্রায় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। দাম নির্ধারণের প্রধান কারণ গাছের আকার, বয়স এবং প্রজাতি। বিভিন্ন স্থানে দাম কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে এবং বিশেষ করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে এই গাছের দাম কিছুটা বেশি হতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের কাঠগোলাপ গাছের দামের তালিকা
কাঠগোলাপ গাছের প্রকার | দাম |
প্লুমেরিয়া রুবরা (লাল) | ৫০০ – ৭০০ টাকা। |
প্লুমেরিয়া রুবরা (গোলাপি) | ৫৫০ – ৭৫০ টাকা। |
প্লুমেরিয়া রুবরা (সাদা) | ৬০০ – ৮০০ টাকা। |
প্লুমেরিয়া অলবা (সাদা) | ৬৫০ – ৮৫০ টাকা। |
প্লুমেরিয়া পুডিকা (হলুদ) | ৭০০ – ৯০০ টাকা। |
কাঠগোলাপ গাছ কত বড় হয়
কাঠগোলাপ গাছ সাধারণত ১৫ থেকে ২৫ ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পায়। তবে পরিচর্যার উপর নির্ভর করে এই উচ্চতা কমবেশি হতে পারে। গাছটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং সঠিক পরিচর্যা ও সঠিক পরিবেশ পেলে ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আকারে পৌঁছাতে পারে। কাঠগোলাপ গাছের শাখা-প্রশাখা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয় যা একটি বৃহৎ পরিসরে ছায়া প্রদান করে। এই গাছের ফুলগুলো সাধারণত ২-৩ ইঞ্চি ব্যাসের হয় এবং এর গন্ধ খুবই মিষ্টি।
কাঠগোলাপ গাছের চারা কোথায় পাওয়া যায়
বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় নার্সারি ও বাগানবাড়িতে কাঠগোলাপ গাছের চারা পাওয়া যায়। ঢাকার কৃষিবিদ নার্সারি, মিরপুর ১ এর গার্ডেন সেন্টার এবং বনানী নার্সারি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলোতেও বিভিন্ন নার্সারি ও বাগানবাড়ি রয়েছে যেখানে কাঠগোলাপ গাছের চারা সহজেই পাওয়া যায়।
চট্টগ্রামের জনপ্রিয় নার্সারিগুলোতে কাঠগোলাপ গাছের চারা পাওয়া যায। যেমন খুলশী নার্সারি ও পতেঙ্গা বাগানবাড়ি। সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার এলাকা এবং মাধবকুণ্ড নার্সারিতেও কাঠগোলাপ গাছের চারা পাওয়া যায়। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন Daraz, Evaly এবং PriyoShop-এ কাঠগোলাপ গাছের চারা অর্ডার করা যায় যেখানে দাম কিছুটা বেশি হতে পারে।
কাঠগোলাপ গাছের পরিচর্যা
কাঠগোলাপ গাছের সঠিক পরিচর্যা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাটি ও সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ গাছের জন্য ভালো পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সহ উর্বর মাটি প্রয়োজন। গাছের গোড়ায় প্রতিমাসে কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।
পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন ও শীতকালে সপ্তাহে ২-৩ বার পানি দিতে হয়। এছাড়া নিয়মিত পোকামাকড় ও রোগ প্রতিরোধের জন্য বাগান পরিষ্কার রাখা ও প্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত। গাছের পাতা ও ডালগুলো নিয়মিত ছাঁটাই করা প্রয়োজন যাতে গাছটি সুস্থ ও সুন্দর থাকে।
কাঠগোলাপ গাছের রোগবালাই ও প্রতিকার
কাঠগোলাপ গাছ সাধারণত কিছু সাধারণ রোগে আক্রান্ত হতে পারে যেমন পাতার দাগ, ফাংগাস আক্রমণ এবং বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ। পাতার দাগের ক্ষেত্রে গাছের পাতাগুলো ছাঁটাই করা এবং ফাংগিসাইড প্রয়োগ করা উচিত। ফাংগাস আক্রমণে, প্রয়োজনীয় ফাংগিসাইড প্রয়োগ ও আক্রান্ত অংশগুলো কেটে ফেলা উচিত।
পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধে নিয়মিত কীটনাশক ব্যবহার ও গাছ পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। গাছের গোড়ায় পানি জমতে না দেওয়া এবং পর্যাপ্ত আলো ও বায়ুপ্রবাহ নিশ্চিত করা জরুরি। পোকামাকড়ের আক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
কাঠগোলাপ গাছের চাষাবাদ
কাঠগোলাপ গাছের চাষাবাদ খুবই সহজ। চারা থেকে পূর্ণাঙ্গ গাছ হওয়া পর্যন্ত গাছের পরিচর্যা ও সঠিক যত্ন নিতে হবে। গাছটি পূর্ণ রোদ পছন্দ করে তাই রোদযুক্ত স্থানে গাছ রোপণ করা উচিত। চারা রোপণের পর নিয়মিত পানি দেওয়া ও সার প্রয়োগ করতে হবে।
গাছের চারপাশ পরিষ্কার রাখা ও প্রয়োজনীয় পোকামাকড় নিরোধক প্রয়োগ করতে হবে। চাষাবাদের সময় মাটি ভালভাবে প্রস্তুত করা উচিত এবং গাছের গোড়ায় কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে হবে। নিয়মিত পানি দেওয়া ও পাতা ছাঁটাই করা প্রয়োজন যাতে গাছটি সুস্থ ও সুন্দর থাকে।
কাঠগোলাপ গাছের উপকারিতা
কাঠগোলাপ গাছের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত উপকারিতা প্রদান করে। কাঠগোলাপ গাছের ফুলগুলো থেকে সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এবং এর পাতাগুলো থেকে বিভিন্ন ওষুধ তৈরি করা হয়।
এছাড়া গাছটি বাতাস পরিশোধন করে ও পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। কাঠগোলাপ গাছের ফুলগুলো বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও ব্যবহৃত হয়। এটি মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে এবং বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
উপসংহার
কাঠগোলাপ গাছ বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফুলগাছ যা এর সৌন্দর্য ও উপকারিতার জন্য পরিচিত। ২০২৪ সালে এর দাম কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। তবে এটি এখনো একটি সাশ্রয়ী মূল্যতে পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা ও যত্ন নিলে এই গাছটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও সারা বছর ফুল ফোটায়।
পরিবেশ রক্ষায় ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কাঠগোলাপ গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। ভবিষ্যতে এর চাহিদা ও জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। কাঠগোলাপ গাছের উপকারিতা ও সৌন্দর্য বিবেচনায় এটি বাগানপ্রেমীদের জন্য একটি অপরিহার্য উদ্ভিদ।