২০২৫ সালে অলিভ অয়েল তেলের দাম কত? | এক্সট্রা ভার্জিন ও রিফাইনড অলিভ অয়েল

অলিভ অয়েল তেল

বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের সংখ্যা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বিশেষ করে ২০২৫ সালে স্বাস্থ্যবান্ধব খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখার প্রবণতা বৃদ্ধির ফলে অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল বাংলাদেশের সাধারণ পরিবারের রান্নাঘরে জায়গা করে নিয়েছে। এক সময় শুধু উচ্চবিত্ত শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল মধ্যবিত্তরাও নিয়মিত ব্যবহার করছেন।

বাংলাদেশে অলিভ অয়েল এখন শুধুমাত্র রান্নার উপকরণ নয়, বরং স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও ঘরোয়া চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। তাই বাজারে এই তেলের দাম, গুণমান, উৎস, ও প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


Table of Contents

অলিভ অয়েল কী? এর ধরন ও গুণগত মান

অলিভ অয়েল হল জলপাই (Olive) ফল থেকে সংগৃহীত একধরনের প্রাকৃতিক তেল। এটি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল যেমন স্পেন, ইতালি, গ্রিস, তুরস্ক ইত্যাদিতে ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হয়। জলপাই ফলকে চেপে বা ঠাণ্ডা প্রক্রিয়ায় তেল নিষ্কাশন করা হয়।

বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন প্রধান তিন ধরনের অলিভ অয়েল:

ধরন বৈশিষ্ট্য উপযুক্ত ব্যবহার
Extra Virgin Olive Oil সরাসরি ঠাণ্ডা চেপে তৈরি, কেমিকেল মুক্ত, সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ সালাদ, কাঁচা খাওয়া, হালকা রান্না
Virgin Olive Oil তুলনামূলক কম বিশুদ্ধ, কিছুটা তাপ প্রক্রিয়াজাত হালকা রান্না ও ড্রেসিং
Refined Olive Oil কেমিক্যাল প্রক্রিয়ায় শুদ্ধ করা, স্বাদ-গন্ধ কম উচ্চ তাপে রান্না ও ভাজার কাজে

মূল উপাদান: মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ভিটামিন ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট


২০২৫ সালে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর দাম কত?

২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে জলপাই উৎপাদনে ঘাটতি, ডলার রেট বৃদ্ধি এবং পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বাজারেও এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এর দাম বেড়েছে।

নিচে ব্র্যান্ডভিত্তিক আপডেট মূল্য তালিকা দেওয়া হলো:

ব্র্যান্ড পরিমাণ ২০২৫ সালের দাম ২০২৪ সালের দাম
Borges ১ লিটার ৳১,৩৫০–৳১,৫০০ ৳১,১০০–৳১,২৫০
Figaro ৫০০ মি.লি. ৳৮৫০–৳৯৫০ ৳৭০০–৳৮৫০
Bertolli ১ লিটার ৳১,৬৫০–৳১,৮০০ ৳১,৩০০–৳১,৫০০
Olivital ১ লিটার ৳১,২৫০–৳১,৪৫০ ৳১,০০০–৳১,২০০
California Garden ২৫০ মি.লি. ৳৫৫০–৳৬৫০ ৳৪৫০–৳৫৫০

দামের উর্ধ্বগতি কারণ:

  • ইউরোপে খরার কারণে জলপাই উৎপাদন কমেছে

  • ডলারের মান বেড়ে আমদানির খরচ বৃদ্ধি

  • স্বাস্থ্য সচেতনতায় চাহিদা বেড়েছে, সরবরাহে চাপ

দারাজ, সিন্দাবাদ, চিল, আজকেরডিল, ও ফেসবুক পেইজ ভিত্তিক কিছু রিটেইলারের অফারেও দাম ভিন্নতা থাকতে পারে।


রিফাইনড ও ভার্জিন অলিভ অয়েল এর দাম ২০২৫

সাশ্রয়ী মূল্যে যারা অলিভ অয়েল কিনতে চান, তাদের জন্য Refined বা Virgin ধরনের তেলও উপযোগী হতে পারে।

ধরন পরিমাণ ২০২৫ সালের দাম (প্রায়)
Virgin Olive Oil ১ লিটার ৳৯০০–৳১,২০০
Refined Olive Oil ১ লিটার ৳৬৫০–৳৯০০
Refined (Local/Generic) ৫০০ মি.লি. ৳৩৫০–৳৫০০

🔍 যদিও পুষ্টিগুণ কিছুটা কম, তবে রান্নার তেলে ব্যবহার করার জন্য Refined Olive Oil বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

অলিভ অয়েল কেনার সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত

বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের অলিভ অয়েল পাওয়া যাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে এক্সট্রা ভার্জিন, ভার্জিন ও রিফাইনড। এসব তেলের মান, উৎস ও প্যাকেজিং ভিন্ন হওয়ায় একজন সচেতন ভোক্তার উচিত কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক যাচাই করে দেখা। প্রথমত, যেহেতু এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল সবচেয়ে বেশি বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর, তাই যদি আপনি পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যগত উপকারের বিষয়টি গুরুত্ব দেন, তাহলে অবশ্যই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল নির্বাচন করা উচিত। এই তেল সাধারণত ঠাণ্ডা প্রক্রিয়ায় সরাসরি জলপাই থেকে নিষ্কাশিত হয়, ফলে এতে কৃত্রিম রাসায়নিক বা প্রিজারভেটিভ থাকে না এবং এর পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে।

এছাড়া তেলের উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদ শেষের সময় দেখাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই শুধু দাম দেখে তেল কিনে ফেলেন, কিন্তু তেল যদি পুরনো হয় বা সংরক্ষণের সময়সীমা পার হয়ে যায়, তাহলে তেলের স্বাদ ও গুণগত মান দুটোই নষ্ট হতে পারে। তাছাড়া অলিভ অয়েল সাধারণত গাঢ় রঙের বোতলে বিক্রি হয়, কারণ আলো এলে এর গুণগত মান হ্রাস পেতে পারে। তাই স্বচ্ছ প্লাস্টিকের বোতলে রাখা তেল না কেনাই ভালো। প্যাকেজিংয়ের মান, বোতলের সীল এবং সংরক্ষণের পরিবেশ সবকিছুই একজন সচেতন ভোক্তার বিবেচনার অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।

অলিভ অয়েলের ব্র্যান্ড এবং উৎপত্তি দেশও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড যেমন Borges, Bertolli, Figaro ইত্যাদি তাদের পণ্যের মানে নির্ভরযোগ্যতা বজায় রেখেছে বহু বছর ধরে। অন্যদিকে স্থানীয় কিছু ব্র্যান্ড অপেক্ষাকৃত কম দামে তেল বাজারজাত করলেও সবসময় সেগুলোর মান যাচাই করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নকল বা মিশ্রিত অলিভ অয়েল বাজারে ছড়িয়ে দেয়, যা সাধারণ ভোক্তা বুঝে উঠতে পারেন না। আসল এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের স্বাদ সাধারণত একটু কড়া, তেতো ও ঘন হয়। যদি কোনো তেল অতিরিক্ত হালকা, ঘ্রাণহীন বা মিষ্টি লাগে, তাহলে তা নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ থাকে।

তেল কেনার সময় সম্ভব হলে ল্যাব সনদ বা মান সনদ থাকা ব্র্যান্ড বেছে নেওয়া শ্রেয়। অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কিছু নামী ব্র্যান্ডে ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়, কিন্তু সেই অফারের ফাঁদে পড়ে নকল বা নিম্নমানের তেল কেনার ঝুঁকি থাকে। তাই দরদাম মিলিয়ে, ব্র্যান্ড যাচাই করে, প্রয়োজন হলে আগের অভিজ্ঞতা ও অন্য ক্রেতার রিভিউ দেখে তেল কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ।


অলিভ অয়েলের উপকারিতা: স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য ও প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রাকৃতিক সহায়ক

অলিভ অয়েল একদিকে যেমন রান্নার তেল, অন্যদিকে এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবেও বিবেচিত হয়। বিশেষ করে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল শরীরের জন্য বিভিন্নভাবে উপকারী এবং এটি দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করলে শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নত হতে পারে। এই তেলে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহারে খারাপ কোলেস্টেরল কমে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়ে, ফলে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে এবং ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই কারণেই ডাক্তাররা অলিভ অয়েলকে হার্ট-ফ্রেন্ডলি ফ্যাট হিসেবে অভিহিত করেন।

এছাড়াও এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরে জমে থাকা ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং কোষকে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করে। ফলে এটি বার্ধক্য প্রতিরোধে এবং ক্যানসার, পারকিনসন বা আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। নিয়মিত ব্যবহার করলে এটি রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কমে। এছাড়া অলিভ অয়েল হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ত্বক ও চুলের যত্নেও অলিভ অয়েল অত্যন্ত উপকারী। এটি ত্বকে প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং নিয়মিত ব্যবহারে শুষ্কতা, চুলকানি, এলার্জি ও বলিরেখা প্রতিরোধে সাহায্য করে। একইভাবে চুলে ম্যাসাজ করলে এটি চুলের গোড়া শক্ত করে, খুশকি প্রতিরোধ করে এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। শুধু তাই নয়, অনেকে এটি প্রাকৃতিক মেকআপ রিমুভার হিসেবেও ব্যবহার করেন, কারণ এটি ত্বকে কোনো ধরনের ক্ষতি না করে জেন্টলি মেকআপ পরিষ্কার করে।

সাধারণ রান্নার তেল যেমন সয়াবিন বা পাম অয়েলের তুলনায় অলিভ অয়েল বেশি স্বাস্থ্যসম্মত, কারণ এতে ট্রান্সফ্যাট বা রেফাইন্ড কেমিকেল যুক্ত থাকে না। যদিও এর দাম তুলনামূলক বেশি, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অর্থনৈতিক খরচের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই যারা শরীর নিয়ে সচেতন এবং প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্য অলিভ অয়েল একটি অনন্য পছন্দ হতে পারে।

বাংলাদেশে অলিভ অয়েলের বিকল্প ব্যবহার: শুধু রান্নায় নয়, বহু উদ্দেশ্যে ব্যবহারযোগ্য একটি তেল

বাংলাদেশে অলিভ অয়েলের ব্যবহার বর্তমানে শুধু রান্নার উপাদান হিসেবে সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে এটি বহুমুখী কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, বিশেষ করে প্রাকৃতিক স্কিন কেয়ার ও হেয়ার কেয়ারে। একদিকে যেমন এটি শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের উৎস, অন্যদিকে এটি বিভিন্ন দৈনন্দিন যত্নে কার্যকর একটি ঘরোয়া সমাধান হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে অলিভ অয়েল দিয়ে চুলে ম্যাসাজ করার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে, কারণ এটি খুশকি প্রতিরোধে এবং চুলকে কোমল রাখাতে সহায়ক। ত্বকে ব্যবহারের জন্য এটি একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার, যা শুষ্কতা দূর করে ত্বককে মোলায়েম রাখে এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ব্যবহার করা যায়।

তাছাড়া অনেকে অলিভ অয়েল ব্যবহার করেন হাত-পায়ের রুক্ষতা দূর করতে, নখের যত্ন নিতে কিংবা ঠোঁটের ফাটা সারাতে। এমনকি হালকা পোড়া, কাটাছেঁড়া বা ত্বকের জ্বালাপোড়ার ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল প্রাথমিকভাবে লাগালে ব্যথা ও প্রদাহ কমে। যারা ন্যাচারাল স্কিন কেয়ার পছন্দ করেন, তারা অলিভ অয়েলকে ত্বকে ক্লিনজার হিসেবেও ব্যবহার করেন। এছাড়া এটি এমনকি শিশুর ত্বকে হালকা ম্যাসাজের জন্যও নিরাপদ, কারণ এতে কৃত্রিম কেমিক্যাল থাকে না।

এইভাবে রান্নার বাইরেও অলিভ অয়েলের ব্যবহারিক সুবিধা বাংলাদেশি পরিবারগুলোর মাঝে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, বিশেষত শহুরে মধ্যবিত্ত সমাজে যারা স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য ও স্বাভাবিকতা—এই তিনের সমন্বয়ে জীবনযাপন করতে আগ্রহী।


বাংলাদেশে অলিভ অয়েলের দাম কীভাবে পরিবর্তিত হয়: বৈশ্বিক বাজার ও অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা

বাংলাদেশে অলিভ অয়েলের দাম আন্তর্জাতিক বাজার, আমদানি ব্যয়, ভ্যাট ও শুল্ক, ডলারের বিনিময় হার এবং স্থানীয় চাহিদার ওপর নির্ভর করে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। প্রথমত, যেহেতু বাংলাদেশে জলপাই উৎপাদন হয় না বললেই চলে, তাই সম্পূর্ণভাবে এই তেল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ইউরোপের দেশগুলো, বিশেষ করে স্পেন, ইতালি, গ্রিসের ওপর বাংলাদেশ নির্ভরশীল। এই দেশগুলোর জলবায়ু সংকট, রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা উৎপাদন ঘাটতি সরাসরি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়িয়ে দেয়, যার প্রভাব পড়ে আমাদের দেশেও।

দ্বিতীয়ত, ডলারের বিনিময় হার ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে আরও বেশি হয়েছে, ফলে আমদানি খরচ স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে। সরকার নির্ধারিত শুল্ক, ভ্যাট ও আমদানিকারকদের পরিবহন ব্যয় যুক্ত হয়ে দেশের বাজারে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক সময় বাজারে চাহিদা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে এবং সরবরাহ কমে গেলে দাম আরও বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে রমজান মাস, ঈদ বা শীতে যখন ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েলের ব্যবহার বেশি হয়, তখন দামও কিছুটা বেড়ে যায়।

তবে অনলাইন শপ ও রিটেইল মার্কেটপ্লেসগুলোতে বিভিন্ন অফার ও ডিসকাউন্টের কারণে কিছু সময়ের জন্য দাম কম হতে পারে। আবার কিছু স্থানীয় আমদানিকারক কম দামি রিফাইনড অলিভ অয়েল বাজারে ছাড়ে, যা অনেকেই এক্সট্রা ভার্জিন ভেবে কিনে থাকেন। সুতরাং, বাজারে দাম ওঠানামা থাকলেও সচেতনভাবে কিনলে এখনো তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের অলিভ অয়েল পাওয়া সম্ভব।


এক্সট্রা ভার্জিন বনাম রিফাইনড অলিভ অয়েল: কোনটি কেনার উপযুক্ত?

অনেকেই কনফিউজড থাকেন যে এক্সট্রা ভার্জিন কিনবেন নাকি রিফাইনড। বাস্তবে, এই দুটি তেলের পার্থক্য কেবল দামে নয়, বরং গুণগত মান, প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি, স্বাদ ও ব্যবহারযোগ্যতার মধ্যেও বড় ব্যবধান রয়েছে। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল সরাসরি ঠাণ্ডা চেপে জলপাই থেকে প্রাপ্ত হয় এবং এতে কোনো ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়াকরণ করা হয় না। ফলে এই তেলের স্বাদ তীক্ষ্ণ, গন্ধ প্রকৃত এবং পুষ্টিগুণ সবচেয়ে বেশি থাকে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ই এবং ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিপূর্ণ, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

অন্যদিকে রিফাইনড অলিভ অয়েল মূলত কেমিক্যাল প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত হয়। এতে স্বাদ প্রায় থাকে না, এবং অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য ভেজিটেবল অয়েল বা সংরক্ষণ উপাদান মিশ্রিত হয়। যদিও এটি রান্নার জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় ব্যবহারের উপযোগী, তবে পুষ্টিগুণের দিক থেকে এটি অনেকটা কম কার্যকর। যদি স্বাস্থ্যগত দিক থেকে উপকার চান, তবে অবশ্যই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল আপনার জন্য উপযুক্ত। তবে যারা শুধু সাধারণ রান্নায় তেল ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্য রিফাইনড অলিভ অয়েল কিছুটা সাশ্রয়ী ও উপযোগী বিকল্প হতে পারে।


FAQ: অলিভ অয়েল নিয়ে সাধারণ প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১: এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল কোথায় ব্যবহার করা উচিত?
উত্তর: এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল সাধারণত সালাদ ড্রেসিং, হালকা ভাজা, ডিপিং, কাঁচা খাওয়া ও ত্বকে ব্যবহার করার জন্য উপযুক্ত। উচ্চ তাপে রান্নার জন্য এটি উপযুক্ত নয়।

প্রশ্ন ২: রিফাইনড ও এক্সট্রা ভার্জিন তেলের মধ্যে কোনটি স্বাস্থ্যসম্মত?
উত্তর: এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল সবচেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত, কারণ এটি প্রাকৃতিকভাবে প্রক্রিয়াজাত এবং এতে কৃত্রিম উপাদান বা কেমিক্যাল থাকে না।

প্রশ্ন ৩: বাংলাদেশে সবচেয়ে ভালো অলিভ অয়েল কোন ব্র্যান্ডের?
উত্তর: আন্তর্জাতিক মান বিবেচনায় Borges, Bertolli, Figaro এবং Olivital ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশে জনপ্রিয় এবং গুণগত মানেও নির্ভরযোগ্য।


উপসংহার: এখনই কিনবেন কি না?

২০২৫ সালে বাংলাদেশে অলিভ অয়েলের দাম কিছুটা বেড়েছে ঠিকই, তবে এটি এখনো স্বাস্থ্যসচেতন ভোক্তাদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় ও কার্যকর বিনিয়োগ। বিশেষ করে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল যারা নিয়মিত স্বাস্থ্যবান্ধব খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে চান, তাদের জন্য আদর্শ পছন্দ। তবে যেহেতু দাম বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারে জলপাই উৎপাদনের অনিশ্চয়তা রয়েছে, তাই এখনই উপযুক্ত ব্র্যান্ড থেকে একটি ভালো মানের বোতল সংগ্রহ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যারা কিছুটা সাশ্রয় খুঁজছেন, তারা নির্ভরযোগ্য রিফাইনড তেল ব্যবহার করতে পারেন, তবে স্বাস্থ্যের বিষয়ে কোনো ছাড় না দেওয়াই উত্তম।


এই লেখাটি সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছে: ২৯ জুন ২০২৫

1 thought on “২০২৫ সালে অলিভ অয়েল তেলের দাম কত? | এক্সট্রা ভার্জিন ও রিফাইনড অলিভ অয়েল”

  1. এতে আপনারা জানতে পারবেন বর্তমান বাজার অনুযায়ী অলিভ অয়েল তেলের মূল্য কত এবং কোন ব্র্যান্ডটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এছাড়াও, নিচে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অলিভ অয়েলের মূল্য তালিকা দেওয়া হয়েছে, যা আপনাকে কেনাকাটায় সহায়তা করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *