পিস লিলি গাছের দাম ২০২৪

পিস লিলি গাছের দাম

পিস লিলি গাছ (Peace Lily) বৈজ্ঞানিক নাম স্প্যাথিফিলাম (Spathiphyllum) একটি জনপ্রিয় গৃহসজ্জার উদ্ভিদ যা তার চমৎকার সবুজ পাতা ও সাদা ফুলের জন্য বিখ্যাত। এই গাছটি শুধুমাত্র সুন্দরই নয় বরং বায়ু পরিশোধনের ক্ষমতার জন্যও প্রসিদ্ধ। বর্তমান সময়ে বাড়ির ভেতরে সজ্জার জন্য এর চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই চাহিদার পেছনে রয়েছে এর আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা। ২০২৪ সালে পিস লিলি গাছের দাম এবং এর অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এই আর্টিকেলটি উপকারী হবে।

পিস লিলি গাছের বৈশিষ্ট্য

পিস লিলি গাছের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর দীর্ঘ চকচকে সবুজ পাতা এবং দুধ সাদা ফুল যা একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফুটে। গাছটি সাধারণত ১ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় এবং এর পাতার দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি খুবই কম আলোতেও ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। এটি গাছটিকে অভ্যন্তরীণ উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় উদ্ভিদ করে তুলেছে।

পিস লিলি গাছের বায়ু পরিশোধন ক্ষমতা এটিকে গৃহস্থালির জন্য অত্যন্ত উপযোগী করে তুলেছে। এই গাছটি বায়ু থেকে বেনজিন, ফরমালডিহাইড এবং ট্রাইক্লোরোইথিলিনের মতো ক্ষতিকারক উপাদান দূর করতে পারে। এই কারণে একে প্রায়শই “প্রাকৃতিক এয়ার পিউরিফায়ার” বলা হয়।

পিস লিলি গাছের দাম কত ২০২৪

২০২৪ সালে পিস লিলি গাছের দাম কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে যা বিভিন্ন অঞ্চলের উপর নির্ভর করে। সাধারণত একটি ছোট পিস লিলি গাছের দাম ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা হতে পারে। বড় ও পূর্ণবয়স্ক গাছের দাম ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। দাম নির্ভর করে গাছটির আকার, বয়স এবং বিক্রেতার উপর। কিছু বিশেষ ধরনের গাছ যেমন বড় এবং ফুলে ভরপুর গাছের দাম ২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

বিভিন্ন দেশে পিস লিলি গাছের দামের তালিকা ২০২৪

দেশ দাম (বাংলাদেশী টাকা)
বাংলাদেশ ৫০০ – ১৫০০ টাকা।
ভারত ৪০০ – ৮০০ টাকা।
যুক্তরাষ্ট্র ২০০০ – ৫০০০ টাকা।
যুক্তরাজ্য ২০০০ – ৫০০০ টাকা।
মালয়েশিয়া ১০০০ – ৩০০০ টাকা।
সিঙ্গাপুর ১০০০ – ৩০০০ টাকা।
থাইল্যান্ড ১০০০ – ৩০০০ টাকা।

ইন্ডিয়াতে পিস লিলি গাছের দাম

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পিস লিলি গাছের দাম কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। মুম্বাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু এবং কলকাতার মতো বড় শহরগুলোতে এর দাম ৪০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। তবে কিছু অঞ্চলে দাম আরো বেশি হতে পারে। অনলাইন বিক্রেতাদের কাছ থেকে এই গাছ কিনতে গেলে দাম কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে। কিছু জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট যেমন ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজন এবং নর্সারি লাইভ থেকে এই গাছ কেনা যায়।

ভারতে এই গাছের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে গাছের আকার, বয়স এবং স্বাস্থ্য অবস্থার উপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া কিছু বিশেষ প্রজাতির গাছ যা বাজারে সহজলভ্য নয় সেগুলোর দাম সাধারণত বেশি হয়।

বাংলাদেশে পিস লিলি গাছের দাম

বাংলাদেশে পিস লিলি গাছের দাম বিভিন্ন নার্সারি ও অনলাইন বিক্রেতার উপর নির্ভর করে। ঢাকায় এর দাম সাধারণত ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীতে এই দাম কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।

বাংলাদেশে পিস লিলি গাছ কেনার ক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দারাজ, আজকের ডিল এবং অন্যান্য ই-কমার্স সাইট থেকে এই গাছ কেনা যেতে পারে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে এর দাম ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

বাংলাদেশে পিস লিলি গাছের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থানীয় চাহিদা ও সরবরাহের উপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া বিশেষ ধরনের পিস লিলি গাছ যেমন বড় ও পূর্ণবয়স্ক গাছের দাম ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

অন্যান্য দেশে পিস লিলি গাছের দাম

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে পিস লিলি গাছের দাম কিছুটা বেশি হতে পারে। সাধারণত এই দেশগুলোতে এর দাম ২০ থেকে ৫০ ডলারের মধ্যে হতে পারে যা বাংলাদেশী টাকায় ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ডে এই গাছের দাম ১০ থেকে ৩০ ডলারের মধ্যে হতে পারে যা বাংলাদেশী টাকায় ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

এই গাছের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের স্থানীয় বাজারের চাহিদা ও সরবরাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া পিস লিলি গাছের প্রাপ্যতা, গুণমান এবং আকারের উপর ভিত্তি করে দাম পরিবর্তিত হতে পারে।

পিস লিলি গাছ কোথায় কিনতে পাওয়া যায়

পিস লিলি গাছ স্থানীয় নার্সারি এবং গার্ডেন সেন্টার থেকে সহজেই কেনা যায়। এছাড়াও এই গাছটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন আমাজন, দারাজ এবং স্থানীয় ই-কমার্স সাইট থেকেও কেনা যেতে পারে। অনলাইন কেনাকাটার সুবিধা হলো এখানে বিভিন্ন বিক্রেতার দামের তুলনা করা যায় এবং সহজে ডেলিভারির মাধ্যমে পছন্দসই গাছটি ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয়।

পিস লিলি গাছ

এই গাছ কেনার ক্ষেত্রে স্থানীয় নার্সারিগুলোতে গিয়ে সরাসরি গাছ নির্বাচন করার সুবিধা রয়েছে। এতে গাছটির স্বাস্থ্য ও আকার সম্পর্কে সরাসরি ধারণা পাওয়া যায়। তবে অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিক্রেতার মূল্য ও গ্রাহক প্রতিক্রিয়া দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।

পিস লিলি গাছের পরিচর্যা

পিস লিলি গাছের পরিচর্যা সম্পর্কিত টিপসগুলো পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো:

আলো এবং ছায়া:

  • পিস লিলি গাছ আংশিক আলো এবং ছায়ায় ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়।
  • সরাসরি সূর্যের আলো এড়িয়ে রাখা উচিত, কারণ অতিরিক্ত আলো পাতার ক্ষতি করতে পারে।

তাপমাত্রা:

  • গাছটি ১৮-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।
  • গরম এবং ঠাণ্ডা উভয় পরিবেশেই এটি টিকে থাকতে পারে, তবে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম পরিবেশে ক্ষতি হতে পারে।

পানি দেওয়া:

  • পিস লিলি গাছের মাটি সব সময় আর্দ্র রাখা উচিত, তবে অতিরিক্ত পানি দেওয়া যাবে না।
  • সাধারণত সপ্তাহে একবার পানি দেওয়া যথেষ্ট, তবে মাটির আর্দ্রতা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।
  • অতিরিক্ত পানি দিলে মাটি জলাবদ্ধ হয়ে শিকড় পচে যেতে পারে।

সার দেওয়া:

  • প্রতি ১৫ দিন পর পর মাটিতে সামান্য সার যোগ করা উচিত, যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
  • সঠিক পরিমাণে সার ব্যবহার করা জরুরি, অতিরিক্ত সার গাছের ক্ষতি করতে পারে।

পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ:

  • পিস লিলি গাছের পাতাগুলো মাঝে মাঝে ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত যাতে পোকামাকড় থেকে রক্ষা পায়।
  • গাছের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার রাখা এবং পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

মাটি ও পানির সংমিশ্রণ:

  • মাটি হালকা এবং পানি নিস্কাশনক্ষম হওয়া উচিত, যাতে পানি জমে না থাকে।
  • মাটির সঠিক আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য সময়ে সময়ে মাটি পরীক্ষা করুন।

এই টিপসগুলো মেনে চললে, আপনার পিস লিলি গাছ সুস্থ ও সবলভাবে বেড়ে উঠবে এবং দীর্ঘদিন ধরে সুন্দর থাকবে।

রোগ ও প্রতিকার

পিস লিলি গাছের সাধারণ কিছু রোগ রয়েছে যেমন পাতা হলুদ হয়ে যাওয়া, ফাংগাস আক্রমণ ইত্যাদি। পাতা হলুদ হয়ে গেলে সেটি শুকিয়ে যায় এবং এর পেছনে কারণ হতে পারে অতিরিক্ত পানি বা পানির অভাব। ফাংগাস আক্রমণ হলে পাতায় দাগ পড়ে এবং এই ক্ষেত্রে ফাংগাস প্রতিরোধক স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। রোগ প্রতিরোধের জন্য গাছটি পরিষ্কার রাখা ও মাটির সঠিক যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

পাতা হলুদ হয়ে গেলে গাছের শিকড় পরীক্ষা করতে হবে যদি শিকড়ে কোনো সমস্যা না থাকে তবে গাছটি বেশি আলো পায় কিনা তা দেখতে হবে। অতিরিক্ত আলো পাতা হলুদ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া ফাংগাস আক্রমণ হলে মাটি পরিবর্তন করে নতুন মাটিতে গাছটি বসানো যেতে পারে।

গাছের বংশবৃদ্ধি

পিস লিলি গাছের বংশবৃদ্ধি সাধারণত চারা তৈরি করে করা হয়। পিস লিলি গাছের শিকড় থেকে নতুন চারা বের হয় এবং এই চারাগুলো আলাদা করে নতুন পাত্রে রোপণ করা হয়। বংশবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত সময় হলো বসন্ত বা গ্রীষ্মকাল। এসময় মাটি ও পরিবেশ উপযোগী থাকায় নতুন চারাগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

এই গাছের বংশবৃদ্ধি করার জন্য প্রথমে গাছটি মাটি থেকে তুলে শিকড় আলাদা করে নিতে হয়। এরপর শিকড়ের সাথে কিছু মাটি রেখে নতুন পাত্রে বসাতে হয়। বংশবৃদ্ধির জন্য মাটি ও পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই এসময় মাটি সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে।

পিসলিলি গাছের উপকারিতা

পিস লিলি গাছের উপকারিতা পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো:

বায়ু পরিশোধন:

  • পিস লিলি গাছ বায়ু থেকে ক্ষতিকারক উপাদান যেমন বেনজিন, ফরমালডিহাইড এবং ট্রাইক্লোরোইথিলিন দূর করতে সক্ষম।
  • এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই গাছটি বায়ুর মান উন্নত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

গৃহসজ্জা ও পরিবেশ:

  • পিস লিলি গাছ গৃহসজ্জার জন্য অত্যন্ত উপযোগী, কারণ এটি ঘরের পরিবেশকে সুন্দর ও মনোরম করে তোলে।
  • গাছটি ঘরের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং একটি সতেজ অনুভূতি প্রদান করে।

স্বাস্থ্যকর পরিবেশ:

  • ঘরের অভ্যন্তরে পিস লিলি গাছ রাখলে বায়ু শুদ্ধ থাকে এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় থাকে।
  • এটি ঘরের বাতাসের গুণগত মান উন্নত করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

মানসিক প্রশান্তি ও স্ট্রেস কমানো:

  • পিস লিলি গাছ স্ট্রেস কমাতে সহায়ক এবং মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে।
  • গাছটি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে, যা দৈনন্দিন জীবনের চাপ কমাতে সহায়ক।

পিস লিলি গাছের এই উপকারিতাগুলোই একে একটি জনপ্রিয় ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

উপসংহার

পিস লিলি গাছ বাড়ির জন্য একটি চমৎকার উদ্ভিদ যা শুধু সুন্দরই নয় বরং স্বাস্থ্যকরও বটে। ২০২৪ সালে এই গাছের দাম কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে তবে এটি সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়। এই গাছের পরিচর্যা সহজ হওয়ায় এটি বাড়ির জন্য আদর্শ উদ্ভিদ। এই গাছ কেনার আগে স্থানীয় ও অনলাইন বিক্রেতাদের মূল্য তালিকা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত এবং গাছটির সঠিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। ভবিষ্যতে এই গাছের বাজার পরিস্থিতি কেমন হবে তা সময়ই বলে দেবে তবে এই গাছের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *